নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে কি হবে না- এ নিয়ে ছিল বিস্তর গুঞ্জন। বিরোধী আন্দোলন আর বিদেশি চাপের কারণে কেউ কেউ বলছিলেন তফসিল ঘোষণায় বিলম্ব হতে পারে। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। সরকার ঝুঁকি নিতে চায়নি। তাই দ্বিতীয় চিন্তার সুযোগ দেয়নি কাউকে। এ সময় সরকারের পাশে এসে দাঁড়ায় আঞ্চলিক ও বৃহৎ শক্তি। তাদের চ্যালেঞ্জ, কেউ কিছু করতে পারবে না। আর তখনই দলবদলের খেলা শুরু হয়ে যায়। আগে রাজনীতিকরা দলে ভেড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত থাকতেন। হাল আমলে একটি শক্তিশালী মহল এই কাজটি করছে।
এতে লাভ যেমন হয়েছে, তেমনি ক্ষতিও হয়েছে। ভয়ে অনেকেই বাড়িছাড়া হয়েছেন। কেউ কেউ নানা অজুহাতে দেশ ত্যাগ করেছেন। মজার ঘটনা হচ্ছে, অনেকদিন যাবৎ বিদেশে রয়েছেন এমন রাজনীতিকদের সঙ্গেও ভিন্ন পেশার একজনের মাধ্যমে নির্বাচনে যোগ দেয়ার নানামুখী চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। কৌশলে নেতারা নিজেদেরকে রক্ষা করেছেন। এমন একজন নেতা নাকি বলেছেন, আগে আমার নেতাকে ছেড়ে দেন। তারপর বিবেচনা করে দেখবো। শেষ অব্দি এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। দলবদলের খেলায় ভয় আর টাকা প্রাধান্য পায়। বলা হয়, আপনার নামে যেসব মামলা রয়েছে সেগুলো দ্রুত সচল এবং বিচার সম্পন্ন হবে। এই বয়সে সারাজীবন জেলেই থাকতে হবে। অনেকের কাছেই এসব প্রস্তাব যায়। নব্বইভাগ প্রস্তাব আঁতুড় ঘরেই মারা যায়। কেউ কেউ রাজি যে হননি তা কিন্তু নয়। দল ছাড়ুন। স্বতন্ত্র হয়ে যান। টাকা পয়সা যা লাগে আমরা দেবো। দর উঠেছিল ৩ কোটি টাকা। এছাড়া লোভনীয় কিছু প্রস্তাবও ছিল। একদিকে টাকা অন্যদিকে ভয়। রাজনীতিকরা কোনটা বেছে নেবেন? বেশির ভাগ রাজনীতিক এই প্রস্তাবে সায় দেননি। এর মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে মানবজমিন অনুসন্ধানী টিমের কথা হয়েছে। তারা বলছেন, সকালে এক গ্রুপ, রাতে অন্য গ্রুপ এসে চাপ দিয়েছে। লোভ দেখিয়েছে। বলেছে, আপনার কিছু করতে হবে না। শুধু মনোনয়ন পেপারে সই করবেন।আপনার জমাও দিতে হবে না। আমরা জমা দেবো। স্বতন্ত্র হতে পারেন অথবা নতুন কোনো দলে নাম লেখাতে পারেন।
বিদেশে অবস্থানরত একজন বিএনপি নেতাকে প্রস্তাব দেয়া হয়, তিনি যা চান তাই দেয়া হবে। কোনো দলে বা স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন। এমনকি নৌকা প্রতীকেও আপত্তি নেই। এই নেতার সঙ্গে দু’দফা বৈঠক হয়। তিনি বারবারই বলছিলেন তার নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই। এক পর্যায়ে তিনি জানান, আপনারা যখন এত করেই বলছেন আমি রাজি হতে পারি। তবে একটি শর্তে। আর সেটা হচ্ছে, আমার নেতাকে মুক্তি দিতে হবে। তারপর অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।এরপর আলোচনা ভেস্তে যায়। একজন সাবেক মন্ত্রীকেও এ প্রস্তাব দেয়া হয় নরমে গরমে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নানাভাবে চাপ দেন। মোটা অংকের টাকার কথাও বলেন। কৌশল করে তিনি বিদেশ চলে যান। বিরোধী দলের এমন কোনো সাবেক এমপি নেই যাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছেনি। নানা অজুহাতে তারা দাওয়াত কবুল করেননি। কেউ বলেছেন, আমি অসুস্থ। কেউ কেউ বলেছেন, সক্রিয় রাজনীতি করার ইচ্ছা নেই। দল যেহেতু নির্বাচনে নেই সে জন্য আমার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়। এ সময় নানাভাবে বোঝানো হয়। বলা হয়, বুঝতেই তো পারেন। না বললে পরিণতি কী হতে পারে। দু’একজন টোপ গিলেছেন। অনেকে কায়দা করে বেঁচে গেছেন।তফসিল ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টা আগে একটি পাঁচতারকা হোটেলে বিরোধী শিবিরের অপেক্ষাকৃত তরুণ ৩ নেতার সঙ্গে বৈঠক হয়। কিন্তু এই নেতারা উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে ভয় আর লোভের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। তারা যে ঝামেলার মধ্যে পড়েননি তা কিন্তু নয়।
অন্য দলগুলোর নেতাদের সঙ্গেও হয়েছে একাধিক বৈঠক।এরমধ্যে একটি দল বেশির ভাগ নির্বাচনেই অংশ নিয়েছিল।তবে এবার তারা আগে থেকেই বলে আসছিল, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু তফসিলের আগে প্রচণ্ড চাপ তৈরি করা হয় তাদের ওপর। দেয়া হয় নানা প্রস্তাব। দলটির নেতারা প্রস্তাবে রাজি না হয়ে বলেন, পীর সাহেব মুরিদদের কাছে কথা দিয়েছেন। তিনি তো এটার বরখেলাপ করতে পারেন না। একপর্যায়ে মাহফিলের কথা বলে সব নেতা একযোগে ঢাকা ত্যাগ করেন।
ডান-বাম সবার কাছেই প্রস্তাব যায়। কারাগারেও রাত-দুপুরে তাদের তৎপরতা ছিল। একেবারে যে সফল হননি তা নয়। অনেকে আবার বিনীতভাবে প্রস্তাবে সায় দেননি। একজন শীর্ষনেতার সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয়। যেখানে আসন ভাগাভাগি ছাড়া মামলা প্রত্যাহারের প্রস্তাবও ছিল।