পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস্। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠক হয়। বৈঠকে ঢাকায় অবস্থানরত ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদ-উল আলম উপস্থিত ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে শ্রম ইস্যুতে তাদের নীতি জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে। ওই নীতি ঘোষণার দিনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিনকেন বাংলাদেশের গার্মেন্ট অধিকার নিয়ে কাজ করা নেত্রী কল্পনা আক্তারের প্রসঙ্গ টানেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ওই মেমোরেন্ডামবলে বাংলাদেশকে টার্গেট করা হতে পারে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস এরইমধ্যে সরকারকে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য আগেই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন। সেই নীতি কার্যকরও হচ্ছে।
পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে পিটার হাসের আজকের বৈঠকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো তেমন কিছু জানানো হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়েই এই বৈঠক হয়েছে। স্মরণ করা যায়, পূর্বনির্ধারিত ১০ দিনের ছুটি কাটিয়ে সোমবার ঢাকায় ফিরেছেন পিটার হাস্।
এর আগে গত ১৬ই নভেম্বর তিনি শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়েন। রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের তাদের কর্মস্থল থেকে নিজ দেশে বা অন্যত্র ছুটিতে যাওয়া স্বাভাবিক নিয়ম হলেও রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সফরটি বেশ আলোচিত হয়।
পিটার হাস্ ছুটিতে যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের কাছে মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র চিঠি পৌঁছে দেন। ওই চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সহিংসতামুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং নিঃশর্ত সংলাপের আহ্বান জানায়। এদিকে পররাষ্ট্র সচিব ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠকে সম্পর্ক উন্নয়নে রুটিন বৈঠক হিসেবে আখ্যা দিয়েছে উভয় দেশ। মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক বার্তাটি ছিল এমন- ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতে আজ রুটিন বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস্ এবং পররাষ্ট্র সচিব মোমেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশ্ন সাংবাদিকরা বৈঠকের খোঁজ কীভাবে পেলেন?
তবে ওই বৈঠকের খোঁজ সাংবাদিকরা কীভাবে পেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। বৈঠকের পর সচিব এবং রাষ্ট্রদূত উভয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনের বাইরে অপেক্ষমাণ গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের এড়িয়ে যান। বিকালে সেগুনবাগিচায় উপস্থিত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় সচিব-মার্কিন দূত বৈঠক বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে মন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, এটা একটি রুটিন বৈঠক। এই বৈঠকের বিষয়ে আপনারা (সাংবাদিকরা) জানলেন কেমন করে? আপনারা তাদের ত্যক্ত করেন কেন? বৈঠকে কী আলোচনা হলো? সে বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব কিংবা মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালকের তরফে মন্ত্রীকে কোনো ব্রিফ করা হয়েছে কিনা? জানতে চাওয়া হয়।
মন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, তারা আমাকে কিছুটা বলেছেন। বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে বিশেষত নির্বাচন, সংলাপ বা শ্রমনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো বার্তা দিয়েছে কিনা? এমন একাধিক প্রশ্নেও মন্ত্রী মুখ খুলেননি। ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে শ্রমনীতির নিশানা বাংলাদেশ হতে পারে মর্মে যে শঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী মোমেন বলেন, দূতাবাস মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। সেটা দিতেই পারে। আমি বিস্তারিত জানি না। তবে আপনাদের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব আছে বলে গোপনীয় ওই চিঠি নিয়ে আপনারা নিউজ করেন। অন্য কোনো দেশের সাংবাদিকরা এসব নিয়ে নিউজ লিখতেন না।