মালয়েশিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করলেন ড. ইউনূস

0
123

মালয়েশিয়ায় প্রখ্যাত আল বুখারি (সামাজিক ব্যবসা) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন ড.  মুহাম্মদ ইউনূস। ১৬ই ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাবর্তন  অনুষ্ঠানে তিনি সভাপতিত্ব করেন। থাই সীমান্তের ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে মালয়েশিয়ার কেদাহ রাজ্যের আলোর সেতারে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির কনভোকেশন হলে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।

ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে  এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, আল বুখারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একটি সামাজিক ব্যবসা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা পর্যায় থেকে তিনি এর সঙ্গে যুক্ত। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রফেসর ড. ইউনূস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর, সদ্য স্নাতক ছাত্রছাত্রী, অনুষদ সদস্যবৃন্দ, সাত জন রাষ্ট্রদূত, পরিচালনা পরিষদ ও সিনেট সদস্যগণ, স্নাতকদের পিতা-মাতা ও পরিবারের সদস্য সহ প্রায় ১,০০০ ব্যক্তির উপস্থিতিতে ব্যবসায় প্রশাসন, প্রাথমিক শিক্ষা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে ২৩১ জন সদ্য স্নাতকের  মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন।

এ ছাড়াও প্রফেসর ইউনূস স্নাতকদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বোচ্চ পুরস্কার চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মোখতার আল বুখারির মায়ের নামে নামকরণ করা শরীফাহ রোকিয়া পুরস্কার সহ বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান করেন। তার দেশের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর অত্যন্ত নির্মম অত্যাচার এবং এ বিষয়ে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলোর সম্পূর্ণ নীরবতার প্রতিবাদে তার সমাবর্তন গাউনের উপর দেশটির পতাকা জড়িয়ে সনদ গ্রহণ করতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। এ ছাড়াও এটি ছিল আল বুখারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র সুলায়মান আবু আনজারের হত্যার বিরুদ্ধে তার সহপাঠীদের প্রতিবাদ।

আবু আনজার অক্টোবর মাসে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসনের সময় স্নাইপারের গুলিতে নিহত হয়। সে সেমিস্টার ছুটির সময় গাজায় তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এবং গাজাবাসীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে দেশে গিয়েছিল। কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র আনজার আল বুখারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সহপাঠীদের কাছে আর ফিরে আসেনি।

সমগ্র ক্যাম্পাস তার এই হত্যাকাণ্ডে ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

 

সদ্য স্নাতকদের অভিনন্দন জানিয়ে ড. ইউনূস তাদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, এই পৃথিবীতে তাদের উপস্থিতি অসামান্য গুরুত্ব বহন করে এবং বর্তমান সভ্যতা মানুষের মধ্যে বিভেদের যে দেয়াল গড়ে তুলেছে তা ধ্বংস করে শান্তির এক সভ্যতা গড়ার তারাই প্রধান সৈনিক।

সামাজিক ব্যবসার নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত আল বুখারি ইন্টারন্যাশনাল (সোশ্যাল বিজনেস) ইউনিভার্সিটি একটি অলাভজনক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। একটি সামাজিক ব্যবসা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এর সকল কোর্স এবং পাঠ্যক্রমে সামাজিক ব্যবসার দর্শনকে অঙ্গীভূত করা হয়েছে। একটি সম্পূর্ণ আবাসিক ক্যাম্পাস এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী অসচ্ছল পরিবারের বিদেশি তরুণ-তরুণী। বিশ্ববিদ্যালয় এই ছাত্রদের ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার খরচসহ তাদের আবাসন, খাবার খরচ, পকেট মানি এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য সকল খরচ বহন করে।
প্রায় ৪৬ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত ক্যাম্পাসটি জেরুজালেমের ডোম অফ দ্য রক, বুখারার সিটাডেল, মরক্কোর আল কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় এবং তুরস্কের সুলেমানি মসজিদের মতো ধ্রুপদী সব বিস্ময় থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে স্থাপত্যগতভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। পৃথিবীর ৬০টি দেশের ১,৩০০ ছাত্র বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে।

আল বুখারি বিশ্ববিদ্যালয় থ্রি জিরো ক্লাব সৃষ্টিকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক জিরো ক্লাবের অধিকারী হিসেবে গর্ব বোধ করে। উল্লেখ্য যে, থ্রি জিরো ক্লাবের মিশন হচ্ছে শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্বের একটি পৃথিবী সৃষ্টি করা। এ ছাড়াও আল বুখারি বিশ্ববিদ্যালয় জুলাই ২০২৩-এ ইউনূস সেন্টারের বাৎসরিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন “১৩তম সামাজিক ব্যবসা দিবসের” আয়োজন করে, যেখানে ৩১টি দেশ থেকে ৬০০-এর অধিক প্রভাবশালী বিশ্ব ও জাতীয় নেতা, নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী, সামাজিক ব্যবসায়ে উৎসাহী ও সামাজিক ব্যবসা অনুশীলনকারী এবং চেঞ্জমেকাররা অংশগ্রহণ করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here