ভয় দেখিয়ে ‘একতরফা নির্বাচন’ করছে সরকার : রিজভী

0
91

রাশিয়া ও ভারতের ওপর ভর করে সরকার ‘একতরফা’ নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, গোটা জাতি এক ভয়ংকর জঙ্গলের মধ্যে বাস করছে। যেখানে চারদিকে ঘিরে আছে ভয় ও আতঙ্কের ব্যারিকেড। এই ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করাই হয়েছে একদলীয় নির্বাচনকে সুসম্পন্ন করা, ভোটারবিহীন নির্বাচনকে নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা একেবারেই বেপরোয়া। উনি ভাবছেন রাশিয়া আছে, ভারত আছে… আমার আবার ভয় কীসের? রাশিয়া ও ভারত আমাকে সমর্থন দিলে আমার কীসের ভোট সেন্টার লাগবে, কীসের ভোটার লাগবে, কীসের স্বচ্ছ নির্বাচন লাগবে?

রিজভী বলেন, তাদের (রাশিয়া ও ভারত) কর্তাব্যক্তিরা মাঝে-মধ্যে স্টেটমেন্ট দিচ্ছেন। তা দেবেনই। বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকুক বা না থাকুক এটা তো ভারতের কোনো যায়-আসে না। আর রাশিয়ার তো মোটেও যায়-আসে না। আর নিজের দেশে গণতন্ত্রের বিশাল ঘাটতি একনায়তন্ত্রের শাসন। সুতরাং তাদের সমর্থনে শেখ হাসিনার আজকে পোয়া-বারো। ভারত নিজে গণতান্ত্রিক দেশ কিন্তু সে অন্য দেশের গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা গণতান্ত্রিক সমাজ গঠিত হোক এটা তারা চাচ্ছেন না। যে কয়জন কর্তা ব্যক্তিরা এসেছেন তারা প্রত্যেকেই জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে আজকে জনসমর্থনহীন সরকারকে সমর্থন দিচ্ছেন। এতে বাংলাদেশের মানুষ বিস্মিত, হতবাক। ভারতের কাছ থেকে তো এটা কামনা করা যায় না। কিন্তু যারা আধিপত্যবাদী শক্তি তারা সব সময় চায় তার আশপাশের ছোট দেশগুলোকে কবজা করতে। ভারতের বর্তমান অবস্থানকে ‘বড় দুর্ভাগ্যজনক’ অভিহিত করেন তিনি।

তিনি বলেন, একাত্তর সালে আমাদের ভরসা ছিল জনগণ… মুক্তিযুদ্ধে আশ্রয় দিয়েছে, খাবার দিয়েছে এবং পথ চিনিয়ে দিয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ের। আমরা গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করছি, আমরা সশস্ত্র বিপ্লব করছি না।

রিজভী বলেন, ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে র ঘটনা কে করেছে তা এখন জনগণের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আর পুলিশ কমিশনার কোনো কিছু তদন্ত না করেই বলে দিলেন যে, এটা অবরোধ-হরতালকারীরা করেছে! এই অবরোধ-হরতালকারীদের ওপর দায় চাপানো এটা একটা পূর্ব পরিকল্পিত পরিকল্পনা। এটা আমরা বারবার বলি যে, সরকার এখন জঙ্গি নাটক করবে, নাশকতার নাটক করবে, বিভিন্ন জায়গা থেকে এটা বলে আসছি। সেটা এখন বাস্তবে প্রতিফলিত হতে দেখা যাচ্ছে। আজকের রেলওয়ের ঘটনাটাও তাই। ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটের ট্রেনে বারবার কেন ‘নাশকতার ঘটনা ঘটছে’ প্রথমবার ওই পথে দুর্ঘটনার পর সরকার কেন এই রুটে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

রিজভী বলেন, গোটা দেশে সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দল গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য, নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আজকে লড়াই করছে… সবাই ভয়-আতঙ্কে আছে। কেউ যদি সরকারের ন্যূনতম সমালোচনা করে ডান দিকে বাম দিকে তাকায় কেউ শুনল কিনা? কেউ দেখলো কিনা? একাত্তর সালে এজন্যই এত মানুষের প্রাণ গেল, এত নারীর সম্ভ্রম গেল। যে ৫২-৫৩ বছর পরও ক্ষমতাসীনদের ভয়ে সবসময় কুণ্ঠিত থাকতে হবে, ডানে-বামে সবসময় তাকাতে হবে, সামনে-পেছনে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, আমি সরকারের যতটুকু সমালোচনা করলাম সেটা সরকারের লোকেরা শুনতে পেল কিনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষমতা নেই, সাধারণ মানুষ বন্দি। আজকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে গোটা সমাজ, গোটা রাষ্ট্র শেখ হাসিনার পক্ষে। কখন কার বাসায় ধেয়ে চলে যাবে যে, যাকে লক্ষ্য করে যাবে তাকে না পেলে তার ছোট ভাইকে ধরবে, না হলে তার বাবাকে ধরবে, না পেলে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যাবে। এটা একাত্তর সালে খান সেনাদের বর্বরতা থেকে কতটুকু পার্থক্য রয়েছে? জনিকে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে ২০১৫ সালের আন্দোলনে। কে করেছে? দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবারে জনির বাবাকেও ধরে নিয়ে গেছে একজন বয়স্ক মানুষ। এই ঘটনা এই অমানবিকতা এই পুলিশি তাণ্ডব আজকে গ্রাম-গঞ্জ থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রত্যেকটি জায়গায় শুধু সন্তান বিএনপি করে, বাবা বিএনপি করে, ভাই বিএনপি করে অথবা বোন বিএনপির মহিলা দলের সদস্য- এই কারণে তাকে যদি না পায় অন্য যারা আছে ভাই-বোনেরা তাদের ওপর নেমে আসে অত্যাচারের খড়ক। এই পরিস্থিতি, এই দৃশ্য দেশব্যাপী।

রিজভী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে পুলিশ আরও ২২৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার এবং ৮টি মামলায় ৭৯৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করেছে।

তিনি আরও জানান, বুধবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চলমান আন্দোলনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা ও ভাষণ দেবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here