বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের উত্তরণ দেখতে চায় বৃটেন।
সোমবার বৃটেনের পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে দক্ষিণ এশিয়ায় দেশটির দ্বি-পাক্ষিক স্বার্থ, এশিয়ার দেশগুলোতে চলমান অসহিষ্ণু নীতি, গণতন্ত্রের অবনতি এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিরাপত্তা ইস্যুতে আয়োজিত এক সেমিনারে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বৃটিশ এমপি সারা ব্রিটক্লিফে, এন্ড্রিউ স্টিফেনসন, আফসানা বেগম এবং লর্ড কোরবান হোসেন।
ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটি অ্যালায়েন্স এর আয়োজনে আয়োজিত এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বৃটিশ এমপি সারা ব্রিটক্লিফে। এতে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ব্রিটিশ এমপি এন্ড্রে স্টিফেনসন।
সেমিনারের বিষয়বস্তু নিয়ে প্রেজেনটেশন উপস্থাপন করেন ব্যরিস্টার আফজাল সৈয়দ আলী। এরপর দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ প্রবাসীদের উদ্বেগ, বিশেষ করে ভারত উপমহাদেশে তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে দেশ ভিত্তিক নিজেদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন সুরমা পত্রিকার সম্পাদক শামসুল আলম লিটন এবং কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ খান।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিনিয়োগ, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং গণতন্ত্র নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা-এসকল বিষয়ে বৃটেনের কৌশলগত ভূমিকা আরও বাড়ানো উচিত।
দক্ষিণ এশিয়ার গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি কীভাবে বৃটেনের সামাজিক একতা এবং নিরাপত্তার বিষয়টিকেও আক্রান্ত করছে সে বিষয়টি নিয়ে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর আব্বাস ফায়িজ এবং অ্যাডভোকেট রেহানা আলী। সেমিনারে উপস্থিত বক্তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। লর্ড কোরবান হোসেন এবং আফসানা বেগম এমপি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো দেশে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে বৃটেনের উচিত সুশাসন, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র ইস্যুতে শর্তারোপ করা।
লর্ড কোরবান হোসেন বলেন, বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের তালিকাসহ যাবতীয় তথ্য তাকে প্রদান করলে তিনি বিষয়টি বৃটেনের ফরেন অফিসকে অবগত করবেন।
বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে বৃটেনের পার্লামেন্টে একটি আইন পাস হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে এন্ড্রিউ স্টিফেনসন এমপি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে থেকে যারা বৃটেনে অর্থ পাচার করছে তাদের বিষয়ে ইকোনমিক ক্রাইম (ট্রান্সফারেন্সি এন্ড এনফোর্সমেন্ট) ২০২২ অ্যাক্ট নিয়ে পার্লামেন্ট বিতর্ক চলছে এবং এ নিয়ে একটি আইন পাস করা হবে।
বৃটেনে বসবাসকারি প্রবাসি বাংলাদেশিদেরকে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে স্থানীয় বৃটিশ এমপিদের কাছে চিঠি লেখার পরামর্শ দেন এই এমপি।
সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খানের রেকর্ডকৃত একটি বক্তব্য প্রচার করা হয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বৃটেনকে আরও সম্পৃক্ততা বাড়াতে এবং কার্যকর ভূমিকা রাখতে বৃটিশ এমপিদের আহবান জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জনগণের দুর্ভোগের কথা প্রচার করেছিলো বিবিসি। বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি তখনকার চেয়ে কোনো অংশে কম দুর্ভোগের নয়।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সেমিনারে বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কোনো সমাধান দৃশ্যমান হচ্ছেনা। এটি আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য একটি গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ এবং তার উন্নয়ন অংশীদার দেশগুলোর সহযোগিতার মাধ্যমে অবশ্যই এ সংকটের সমাধান করতে হবে।
এছাড়াও সেমিনারে পাকিস্তানের ক্রম অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কাশ্মিরের নাগরিকদের অধিকার, ভারতের শীর্ষ কর্তাদের অসহিষ্ণু মন্তব্য এবং সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে দেশটিতে গৃহিত নীতি সম্পর্কে আলোচনা হয়।
বার্নলের সাবেক কাউন্সিলর মুজাক্কির আলীর উপস্থাপনায় সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটি অ্যালিয়েন্সের সেক্রেটারি ফয়জুননূর।