বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায়

0
152

বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা উদ্বিগ্ন। তবে সরকার এ বিষয়ে এখনই প্রতিক্রিয়া জানানো কিংবা হুটহাট কোনো কিছু করার কথা বিবেচনা করছে না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং ব্যবসায়ীদের সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র গত বৃহস্পতিবার নতুন যে শ্রম অধিকারবিষয়ক নীতি ঘোষণা করে, তাতে শ্রমিকের অধিকার হরণ এবং ভয়ভীতি ও নির্যাতনে জড়িতদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য ও ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিধান রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এটি নিয়ে করণীয় ঠিক করতে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা করার কথা বলছেন।

দেশের শীর্ষ কয়েকজন ব্যবসায়ী গতকাল সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম অধিকারবিষয়ক নীতি নিয়ে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জানা।

বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সালমান এফ রহমান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম অধিকারবিষয়ক নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এটি সুনির্দিষ্ট কোনো দেশের জন্য নয়। তিনি বলেন, ‘শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে আমরা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত থেকে কাজ করে যাচ্ছি। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তাদের ঘোষিত নতুন শ্রম অধিকারবিষয়ক নীতির বিষয়ে আমাদের আগবাড়িয়ে জানার কিছু নেই।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শ্রম অধিকারবিষয়ক স্মারক শুধু বাংলাদেশের জন্য, এটা ধরে নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক, ন্যূনতম মজুরি নিয়ে আন্দোলন এবং শ্রম অধিকারবিষয়ক নীতি ঘোষণার সময়টা মিলে যাওয়া অনেকটা কাকতালীয়।

সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন শ্রম অধিকারবিষয়ক নীতি ঘোষণার সময় বাংলাদেশের শ্রমিকনেতা কল্পনা আক্তারের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। ফলে অনেকে শ্রম অধিকারবিষয়ক নীতিটিকে বাংলাদেশের জন্য বলে উল্লেখ করছেন, যা আসলে সরলীকরণ। ব্লিঙ্কেন তাঁর বক্তৃতায় স্পষ্ট করেই বলেছেন, বিভিন্ন দেশের সরকার, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র।

কূটনৈতিক একটি সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস) এবং সমৃদ্ধির স্বার্থে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক রূপরেখা (আইপিইএফ)—এই দুটি ক্ষেত্রেই উন্নত শ্রমমান নিশ্চিতের বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ফলে বাইডেন ঘোষিত নতুন শ্রম অধিকারবিষয়ক নীতির সঙ্গে আইপিএস এবং আইপিইএফের সম্পর্ক রয়েছে।

নতুন ওই শ্রম অধিকারবিষয়ক নীতির সঙ্গে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সংস্থার (এপেক) শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের যোগসূত্র রয়েছে বলেও জানিয়েছে ওই কূটনৈতিক সূত্র। সূত্রটি বলছে, কারণ ১৫ থেকে ১৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে অনুষ্ঠিত এপেক শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের ফাঁকে আইপিইএফে যুক্ত দেশগুলো বেশ কয়েকটি দলিল চূড়ান্ত করেছে। ওই দলিলগুলোর মধ্যে শ্রম অধিকার সুরক্ষার বিষয়টিও আছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শ্রম অধিকার সম্পর্ক নিয়ে কাজে যুক্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্য এক কর্মকর্তা বলছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন শ্রম অধিকারের বিষয়ে যে স্মারক সই করেছেন, সেটি তড়িঘড়ি করে নয়, বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এটি নির্দিষ্ট কোনো দেশ নয়, সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হবে। ফলে এটিকে নিজেদের দিকে টেনে আনার যুক্তি নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই শ্রম অধিকারবিষয়ক নীতি নিয়ে সরকার কোনো আন্তমন্ত্রণালয় সভার কথা বিবেচনা করছে কি না জানতে চাইলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে বলেন, এখন পর্যন্ত বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। তবে আইন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিলে সামনের দিনগুলোতে কোনো যৌথ সভার উদ্যোগ নিতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here