এ যেন মরুভূমির দেশে বাস করছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বাসিন্দারা। টানা সাত দিনের তীব্র দাবদাহে উপজেলার অধিকাংশ গ্রামগুলোতে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। প্রচণ্ড গরমে নাকাল হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় অনেক পরিবার রান্না গোসলসহ অন্যান্য প্রয়োজনে পরিমাণ মতো পানি পাচ্ছেন না।
চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ১৫/২০ ফুট নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। ফলে নলকূপ ও পাম্পে উঠছে না পানি। কিছু কিছু জায়গায় পানি উঠলেও সেটা খুব সীমিত। তবে পানি পেতে অনেকেই পাম্প মাটির ১২-১৪ ফুট গভীরে স্থাপন করছেন। এদিকে চরম বিপাকে পড়েছেন টিউবওয়েল ব্যবহারকারীরা। পানির জন্য যুদ্ধ করে চলেছেন তারা।
পানির চাহিদা পূরণ করতে ১২/১৫ ফুট গর্ত খুঁড়ে সিমেন্টের ও মাটির রিং বসিয়ে পাম্প নিচে নামিয়ে তুলতে হচ্ছে পানি।
দামুড়হুদা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় সরকারি পাঁচ হাজারের বেশি ও ব্যক্তি মালিকানা প্রায় ৪০ হাজার সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজারের উপরে নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি নলকূপে পানি উঠছে না বাকিগুলোতে যে পরিমাণে পানি উঠছে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। দামুড়হুদা উপজেলা সদর, মদনা, দর্শনা, কুড়োলগাছি, সদাবরী, নতিপোতা, হাউলি, কার্পাসডাঙ্গা, কুতুবপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় বেশ কয়েক হাজার নলকূপে একেবারেই পানি উঠছে না। বাকি নলকূপগুলোতে সামান্য পানি উঠছে।
দামুড়হুদা উপজেলা সদরের চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কিছু জায়গায় তীব্র দাবদাহের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। টিউবওয়েলের পানি খুবই কম উঠছে। মাঠের সেচ পাম্পগুলোর একই অবস্থা।
দামুড়হুদার উপজেলার কুড়োলগাছি ইউপি চেয়ারম্যান মো: কামাল বলেন,অতি তীব্র দাবদাহে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আমার ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই টিউবওয়েলে পানি ওঠা একেবারেই কমে গেছে। কিছু টিউবওয়েলে পানি উঠছেনা।
দামুড়হুদা মদনা-পারকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক জিয়াউর রহমান জানান, মাঠের সেচ পাম্পগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। প্রয়োজনের তুলনায় পানি উঠছে না এতে সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া গ্রামের বেশিরভাগ টিউবয়েলগুলোতে একেবারেই পানি উঠছে না। কিছু কিছু টিউবয়েলগুলোতে পানি উঠলেও তাও খুবই কম।
দামুড়হুদা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, পানির স্তর বছর বছরে নিচে নামছে । ৭/৮ বছর আগেও এই অঞ্চলে ৫০-৬০ ফুটের মধ্যে ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ছিল। এখন বর্ষা মৌসুমেও ১২০/১৩০ ফুটের মধ্যে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
এ পরিস্থিতির কারণ হিসেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যত্রতত্র পুকুর-খাল-বিল ভরাট করে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার ও অপরিকল্পিতভাবে স্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সামনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি না হলে পরিস্থিতি খারাপ হবে।