বাস পরিবহন খাত আপাদমস্তক দুর্নীতির কারখানা: রিজভী

0
16

বাস পরিবহন খাত আপাদমস্তক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারখানা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশের সড়ক এখন মৃত্যুপুরী। সড়কে প্রতিবছর ১২ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। ঈদ সহ বিশেষ দিনে দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। এইবারের ঈদ যাত্রায় কেবল ঢাকা ছাড়তেই ৯৮৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে যাত্রীদের। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় বাসের টিকিটের দাম আকাশছোঁয়া। বাস পরিবহন খাত আপাদমস্তক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারখানা।

তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে চলছে সড়কে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি। শ্রমিকলীগ-ছাত্রলীগের কালোবাজারি টিকিটের ব্যবসা নামে চলছে লুটতরাজ। ঈদ যাত্রায় এখন ব্ল্যাক টিকিটের চড়া দাম। জীবনের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোগান্তি আর হয়রানি।

অথচ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলছেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে কোন যানজট বা হয়রানী নেই। মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারছে।’ এ যেন ডামি দায়িত্বশীলের  মুখে দায়িত্বজ্ঞানহীন তামাশার মন্তব্য, এ যেন জনগণের সাথে এক ডাহা মিথ্যাবাদীর ইয়ার্কি-তামাশা। কিন্তু বাস্তবতা হলো-ঈদের প্রাক্কালে বিভিন্ন রুটে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে ঘরমুখো যাত্রীরা এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।

রিজভী বলেন, বিমানের ভাড়া কল্পনাতীত। ট্রেনে টিকিট পাচ্ছে না মানুষ। ট্রেনের টিকিট কাটার প্রক্রিয়াকে দিন দিন জটিলতর করা হচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে এলিট শ্রেণির বাহনে পরিণত হচ্ছে রেলওয়ে। যারা তুলনামুলকভাবে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষ, তারা আসলে অনলাইনের এই জটিল ব্যবস্থা বুঝতে সক্ষম নয়। ফলে একটা নিম্ন-মধ্যম আয়ের বিপুল সংখ্যক মানুষ ট্রেনে চড়ারই অধিকার হারিয়ে ফেলছে। অথচ এরাই ছিল ট্রেনের প্রকৃত যাত্রী।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবারের ঈদ যাত্রায় বেশ কিছু সংখ্যক নারী কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়। এর কারণ সড়ক-মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। দেশে উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা অধিকাংশই বেকার। বেকারত্ব হারে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। তবুও ঈদ আনন্দের। না পাবার মাঝেও অনেক কিছু পাওয়া। তাই ঈদ প্রতিটি মানুষের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ, হাসি এবং সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক-এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। বিশ্ব মুসলিমের এটি সর্বোচ্চ আনন্দ ও খুশীর দিন। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলেই এই উৎসব পরিবার স্বজন-শুভাকাঙ্খীদের নিয়ে উপভোগ করেন। কিন্তু এই বছরেও আবার জনগণের ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র কেড়ে নেয়ায় জনজীবনের এই উৎসব ম্লান হয়ে হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ডামি সরকারের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি হরিলুট আর মহাদুর্নীতির কারণেই মানুষের শেষ হাসিটুকুও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ঈদে আনন্দ উদযাপনের বিপরীতে মুখ লুকিয়ে কাঁদছেন মধ্যবিত্ত মানুষেরা।

তিনি বলেন, ৬ বছরের বেশি সময় ধরে অসুস্থ অবস্থায় বিনা অপরাধে মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বন্দী রাখা হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। যিনি দেশের পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতেই জনগণের ভোটে জয়ী হয়েছেন। সাবেক তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী যিনি দেশের অধিকারহারা জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণ থেকে বিচ্যুত হননি। তার উন্নত চিকিৎসা অতীব জরুরি। অথচ হিংসাশ্রয়ী সরকার গায়ের জোরে গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রীকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না। এই ঈদও পরিবার ছাড়া বন্দী অবস্থায় তাকে পালন করতে হবে।

রিজভী আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, সীমান্ত অরক্ষিত, ভিন্ন রাষ্ট্রের সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশকে অভয়ারণ্য মনে করা, তাদের দ্বারা ব্যাংক লুট, থানা আক্রমণ এখন বাংলাদেশে নিত্যদিনের ছবি। দখলদার সরকার নিজেদের ঘরে ভোট ডাকাতিসহ অহরহ রাষ্ট্রীয় অর্থবিত্ত ডাকাতি করতে পারে, অথচ নিজের ঘরকে বহিঃশত্রু থেকে রক্ষা করতে পারে না।
হত্যা, রক্তপাত, ছিনতাই আর ডাকাতি এদেশে এখন জনজীবনের অনুসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিহত ও আহত হচ্ছে নিরীহ মানুষ। এই মাসেই নরসিংদীতে ‘নগদ’ এর ২ কর্মীকে গুলি করে ৬০ লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here