শিশুদের শরীরে ব্যথা নানা কারণে হতে পারে। যেমন: গ্রোয়িং পেইন, জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস (জিআইএ),লুপাস (সিস্টেমিক লিউপাস ইরিথেমাটোসাস), ভিটামিন ডি স্বল্পতা, লাইম ডিজিজ,-লিউকেমিয়া, বাত জ্বর, পার্থেস ডিজিজ, রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম,কোভিড-১৯, জন্মগত ত্রুটি।
গ্রোয়িং পেইন: বাচ্চারা সারাদিন ছোটাছুটি করে, খেলাধুলা করে। সন্ধ্যায় বা রাতে বিছানায় যাওয়ার পর তারা পায়ে বা শরীরে ব্যথার কমপ্লেইন করে। এই ধরনের ব্যথাকে গ্রোয়িং পেইন বলে। গ্রোয়িং পেইন সাধারণত তিন বছর থেকে শুরু করে বারো বছর পর্যন্ত শিশুদের হতে পারে। এই ব্যথা সব সময় থাকে না। ব্যথা সাধারণত সন্ধ্যা বা রাতের দিকে দেখা যায় এবং সকালের দিকে সেরে যায়। ব্যথা হয় পায়ের থাই, কাফ, হাঁটুর পেছন দিকে। গ্রোয়িং পেইনে সাধারণত কোনো ওষুধ বা চিকিৎসার দরকার হয় না। ব্যথার মাত্রা অনুযায়ী রাতে ব্যথার স্থানে হালকা গরম সেঁক বা ম্যাসাজ করলে বাচ্চা আরামবোধ করে।
প্যারাসিটামল ও ব্যথানাশক ক্রিম বা মলম চিকিৎসকের পরামর্শে দেয়া যেতে পারে।
জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস (জিআইএ): এটি শিশুদের বাতরোগ, যেটার কারণে শিশুরা ব্যথার কমপ্লেইন করে। এই রোগে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে বা গিড়াতে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হয়। প্রদাহের লক্ষণগুলো হচ্ছে- গিড়া ব্যথা, ফুলে যাওয়া ও নড়াচড়া করতে না পারা। তাছাড়া এই রোগে জয়েন্ট স্টিফনেস হয়, যা কিনা হাঁটলে বা এক পজিশনে দাঁড়িয়ে থাকলে বাড়বে। শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে শিশুদের ক্ষুধামন্দা, জ্বর বা জ্বরভাব, শরীরে র?্যাশ দেখা দিতে পারে। এই রোগে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
লুপাস (সিস্টেমিক লিউপাস ইরিথেমাটোসাস): এটি একটি অটোইমিউন রোগ যেটাতে শরীরের একের অধিক জয়েন্টে ব্যথা বা স্টিফনেস থাকবে। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে বুকে ব্যথা, চুলপড়া, জ্বর, চর্মরোগ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এই রোগে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
লাইম ডিজিজ: এটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ। এই রোগে শিশুদের জয়েন্ট ও মাংশপেশি দুটোতেই ব্যথা থাকবে। সঙ্গে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, ত্বকে ফুসকুড়ি ও জ্বরও থাকতে পারে। এই রোগে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
লিউকেমিয়া: এটি একটি রক্তের রোগ। যা হলে রক্তের শ্বেত রক্তকনিকা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায় এবং রক্তের স্বাভাবিক কাজগুলো ব্যাহত হয়। লিউকেমিয়াতে শিশুদের হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা থাকবে। তাছাড়া অন্যান্য উপসর্গগুলো যেমন- নাক দিয়ে রক্তপাত, শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাটবাঁধা, দাঁত বা মাড়ি দিয়ে রক্তপাত, জ্বর, ক্ষুধামন্দা, ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এই রোগে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
বাতজ্ব্বর: বাতজ্বরকে ইংরেজিতে বলে রিউমেটিক ফিভার, এটা বাচ্চাদের প্রদাহজনিত রোগ। সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সের বাচ্চাদের বাতজ্বর বেশি হয়। বাতজ্বর ব্রেইন, হৃৎপিণ্ড, মেরুদণ্ড ও ত্বক ইত্যাদি স্থানকে আক্রান্ত করে। এই রোগে হাত ও পায়ের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা, জ্বর, চামড়ায় লাল দাগ, প্রদাহজনিত কাঁপুনি ও খিঁচুনি, জয়েন্ট ফুলে যাওয়াসহ আরও অনেক সমস্যা দেখা দেয়। এই রোগে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
পার্থেস ডিজিজ: পার্থেস ডিজিজ হিপ জয়েন্ট বা ফিমারের মাথায় রক্ত ????প্রবাহের ব্যাঘাতের ফলে শুরু হয়। সাধারণত ৩-১১ বছর বয়সী বাচ্চারা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগে নিতম্ব বা কুঁচকি, হাঁটু, গোড়ালিতে ব্যথা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও হাঁটাচলা বা মুভমেন্টে সমস্যা হয় এবং আক্রান্ত পা খাটো হয়ে যেতে পারে। এই রোগে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম: এটি একটি স্নায়ুবিক ব্যাধি। রাতে ঘুমনোর সময়ে পায়ে চুলকানির সঙ্গে সঙ্গে পায়ে হালকা খিঁচুনি, ঝাঁকুনি বা পায়ের ভেতরে কোনো অস্বস্তি অনুভব করাকে রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম বলা হয়। অনেক বাচ্চারা এই রোগে ভুগে থাকে। এই সমস্যা এড়াতে শরীরে নির্দিষ্ট ভিটামিনের যথাযথ পরিমাণ থাকা খুবই জরুরি। তাই শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করতে হবে।
কোভিড-১৯: যেসব শিশুরা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিল তাদের কিছু শারীরিক জটিলতা বা ব্যথা দেখা দিতে পারে। এই অবস্থাকে পোস্ট কোভিড সিনড্রম বলা হয়। দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মাংসপেশিতে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই রোগে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
জন্মগত ত্রুটি: মাতৃগর্ভে থাকাকালীন ভ্রূণের ত্রুটি ও অস্বাভাবিকত্বের কারণে অনেক শিশু জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অধিক আঙ্গুল, কম আঙ্গুল, জোড়া আঙ্গুল, কাঁকড়ার মতো আঙ্গুুল, হাত বা পা না থাকা ইত্যাদি অনেক ধরনের জন্মগত ত্রুটি দেখা যায়। এসব ত্রুটির জন্য বাচ্চাদের বিভিন্ন রকম ব্যথা ও দৈনন্দিন চলাফেরায় সমস্যা হয়। সবচেয়ে বেশি পায়ের পাতার গঠনে সমস্যা দেখা দেয়, ফ্লাটফুট বা পেসকেভাস জাতীয় পাতার বিকৃতি হতে পারে। এতে করে পাতা ব্যথা হয়। হাঁটা-চলাফেরায় কষ্ট হয়। এজন্য একজন রিহেব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকে দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রয়োজনে জুতা কারেকশন করা লাগতে পারে।
অন্যান্য: ভিটামিন ডি’র অভাব এবং পুষ্টিকর খাবারের অভাবে শিশুদের হাড় ব্যথা হতে পারে, অনেক সময় শিশুদের পা বেঁকে যেতে পারে (রিকেটস)। সেক্ষেত্রে সকালের রোদটা খুবই উপকারী ভিটামিন ডি’র জন্য। এ ছাড়াও ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার যেমন: ডিম, দুধ, কলিজা, খাসির পায়া, ঢেঁকিছাঁটা চাল, দেশি মুরগি, পালং শাক ইত্যাদি খেতে হবে।