এমভি আব্দুল্লাহ’র আইয়ুব খানের সাক্ষাৎকার
জাহাজ দখলে নেওয়ার পর আমাদের ক্যাপ্টেন জলদস্যুদের জানিয়ে দেন, জাহাজের সবাই মুসলিম, সবাই রোযা রেখেছে, সবাই বাংলাদেশি। বাংলাদেশি নয়, ভারতীয়দের প্রতি খুব আক্রোশ ছিল জলদস্যুদের। ওরা খুঁজছিলো জাহাজে কেউ ভারতীয় আছে কিনা। ওরা নানানভাবে সেটা নিশ্চিত হতে চেয়েছে। আমাদের মধ্যে একজনের বড় গোঁফ দেখে তাকে ভারতীয় বলেও সন্দেহ করেছিল ওরা।
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে পরিবারের কাছে ফেরার পর একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান রবিন। তিনি জানান, জলদস্যুদের ধারণা মানুষকে এভাবে জিম্মি করা হালাল। অর্থনৈতিক সংকট পূরণে এমনটা করাই যায়।
“ওরা খুব কমই নামাজ পড়তো। একদিন মাত্র একজন জলদস্যুকে রোযা রাখতে দেখেছিলাম। ওদেরকে একদিন বলেছিলাম, তোমরাতো মুসলমান। নামাজ-রোযা করো না কেন? ওরা বলেছিল, আমরা মুসাফির।
মুসাফিরের নামাজ-রোযা লাগে না। মাঝেমাঝে ওরা এক ধরনের পাতার সাথে মধু জাতীয় কিছু মিশিয়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করতো। ওরা অনেক সময়ই অনলাইনে বেটিং করতো”, বলছিলেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালিয়া গ্রামের বিনন ব্যাপারী বাড়ির মৃত আজহার মিয়ার ছোট ছেলে আইয়ুব খান রবিন।
কথা বলার জন্য যে দোভাষী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তার সম্পর্কে রবিন বলেন, “ও এর আগে ৬/৭টা জাহাজ ডিল করেছে। ও বলেছিল, ওর বাড়ি কেনিয়ায়। ছোটবেলায় সোমালিয়াতেও থেকেছে। কিছুদিন আগে নাকি যুক্তরাষ্ট্রেও গেছে। ও ছাড়া জলদস্যুদেরও নাকি বিভিন্ন দেশে স্ত্রী-সন্তান আছে।”
জিম্মি জীবনে কি মনে হতো? বেঁচে গেলে কি করার কথা মনে হতো? “আমাদের মধ্যে অনেকেই ভাবতো বাঁচলে চাকরি ছেড়ে দেবে। চাকরি করলেও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তা করবে।”
“শুরুতে ওরা আমাদের সাথে খেলেও পরে অতিরিক্ত ঝালের কারণে আর খায়নি। পরে ওরা নিজেদের জন্য আলাদাভাবে রান্না করতো। এতে আমাদের জাহাজের বাংলাদেশি কুক স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন”, গল্পচ্ছলে বলছিলেন রবিন।
জলদস্যুরা নিজেদের যোগাযোগের নাম্বার দিয়ে গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, “না। তবে, ভুলেই হয়তো আমার এক বন্ধুর মোবাইলে ওদের ই-মেইল লগ ইন করে চলে গেছে।”
রবিন বলছিলেন, ওদের মধ্যে কেউ কোনো দোষ করলে ওদের কমান্ডার মিলিটারি স্টাইলে হাত বেঁধে শাস্তি দিতো। জাহাজ ত্যাগের সময় ওদের ওই নেতা আমাদের ক্যাপ্টেনকে মজা করে একটি কাগজ ধরিয়ে বলেন, ‘এই নাও সার্টিফিকেট দিলাম। এটা দেখলে আগামী ছয় মাস অন্য কোনো জলদস্যু তোমাদের ধরবে না।’