ডামি নির্বাচনের পর বিশ্ব মিডিয়াতে প্রকাশিত খবরে কোথাও আওয়ামী লীগের জন্য সু-খবর নেই। অন্যদিকে প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ সমমনাদের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের মানুষ নির্বাচনে ভোট দানে বিরত থেকে কার্যত অসহযোগ আন্দোলনে জনগনের সম্পৃক্ততা আন্দোলনকারীদের মনোবল চাঙ্গা করতে ব্যপক ভূমিকা রেখেছে।
গত ২৮ অক্টোবরের ক্রাকডাউন এর পর ক্রমাগত নিষ্ঠুর দমনের মুখে থাকা দলটিকে রাজনীতির বাইরে ঠেলে দেয়ার চেষ্টার প্রতিটি পদক্ষেপ ব্যর্থ হওয়াতে সরকারের পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। আওয়ামী পন্থি সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান গতকাল একটা আলোচনায় বলেছেন, বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার কথা, সন্ত্রাসী দল হিসেবে তকমা দেয়ার জিকির তুলে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন কায়েমের যে কথা কারো কারো মুখে উচ্চারিত হচ্ছে তিনি এটাকে কথার কথা বলে মনে করছেন। তিনি মনে করেন, সরকারের এমন কোন পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ নাই।
অন্যদিকে পৃথিবীর প্রায় সব বড় বড় মিডিয়া এই নির্বাচনকে একদলীয় শাসনের দিকে যাত্রা হিসেবে দেখছে। দ্যা গার্ডিয়ান তাদের সম্পাদকীয়তে ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনকে ‘ফেইক’ নির্বাচন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সরকার নির্বাচন করতে গিয়ে একের পর এক আত্মঘাতি পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। নির্বাচনের পরপর ডামি পর্যবেক্ষকদের হাজির করে নির্বাচনকে সবাই বাহবা দিচ্ছে -এমন খবর অনুগত মিডিয়াতে প্রচারের চেষ্টা হলে, ‘ভক্স পপুলি’সহ বেশ কিছু মিডিয়াতে সেই সব পর্যবেক্ষকরা যে আসলে ভুয়া তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পর একের পর এক গণতন্ত্রমনা দেশ এইসব ভুয়া পর্যবেক্ষকদের সাথে তাদের অবস্থানের কোন সম্পর্ক নাই মর্মে বিবৃতি প্রদান করলে শেখ হাসিনার ভাড়া করে আনা এইসব ভুয়া পর্যবেক্ষকদের সামনে মত-বিনিময়, হাসি হাসি মুখে সংবাদ সম্মেলন সহ পুরো নাটকটি ভেস্তে যায়। আপাদমস্তক এক ফটকা চরিত্র উদাম হয়ে যায়- বিশ্ব মিডিয়ার কাছে।
অন্যদিকে ভারতের উপর ভর করে এমন আত্মঘাতি ভোট ডাকাতির নির্বাচনের আয়োজনের পরে ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোর সুর পাল্টাতে শুরু করেছে। বিজেপি ও ভারতের আওয়ামী পন্থি রাজনৈতিক বিশ্লেষক শ্রী রাধার মতো ব্যক্তিরা মিডিয়াকে বলেছেন নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে, তিনি মনে করেন ১০ পারসেন্টের বেশি ভোট পড়ে নাই। ভারতে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার নীতি থেকে সরে আসার জন্য ক্রমাগত চাপ তৈরি হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগ আরও বেশি করে চায়না ঘেষা নীতিতে বাধ্য হবে। ফলে এতে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের ক্ষতিই হবে। অন্যদিকে আমেরিকাকে বৈরি করে তুলে ভারতের কোন ফায়দা নাই। ফলে ভারত-আমেরিকার নীতির যে বৈরীতা আওয়ামী লীগকে বেপরোয়া করতে সাহায্য করছে তারও অবসান চাইছেন ভারতের বিরাট একটা অংশ। কারণ দীর্ঘ মেয়াদে তাদের কমন শত্রু চায়নাকে মোকাবেলার জন্য দুই দেশের ঐক্য দরকার। আর এই হিসেবে আওয়ামী লীগের ভারত ভাগ্যের করুণ পরিণতি নেমে আসছে বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সবমিলিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য ক্রমাগত মিথ্যার জাল বিস্তার করতে করতে আওয়ামী লীগ এখন নিজেই সেই জালে আটকা পড়তে যাচ্ছেন।
এদিকে ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ঝাপিয়ে পড়তে মরিয়া বিরোধী দলের তৃণমূলের লাখ লাখ নেতা-কর্মি ও সমর্থকরা। জাতীয় পার্টির ভাঙ্গন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। জি এম কাদের নিজেই রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারছেননা নেতা-কর্মিদের আন্দোলনের মুখে। অন্য মিত্র দলগুলোও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। আর মাঠের আন্দোলন ও বিদেশীদের চাপ বাড়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের মধ্যেও অস্তিত্বের সংকট তীব্র হতে থাকবে বলে মনে করেন- অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
সব মিলিয়ে ফেইক নির্বাচনের পরে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তিতে নেই আওয়ামী লীগ। বৈধতার সংকট, রাজনৈতিক ভাবে জন সমর্থনহীন, পুলিশ ও মাফিয়া নির্ভর দলটির সুস্থ্যধারায় রাজনীতি করতে চাওয়া রাজনৈতিক নেতাকর্মিরা শেখ হাসিনার হঠকারিতায় অসহায় অবস্থায় পতিত হয়েছেন। এই অবস্থায় নজিরবিহীন তাড়াহুড়ার মধ্যে শপথ ও মন্ত্রিসভা গঠন করে মনোবল চাঙ্গা রাখার কৌশল নেয়া হলেও, এটা যে ভয় থেকেই করা হচ্ছে তা দেশের মানুষের কাছে পরিস্কার। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও জনগনের ভোটে সরকার গঠনের পথে হাটা ছাড়া এই সংকটের কোন সমাধান নাই বলে মত দিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।