এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ হচ্ছে ৩৪ টাকা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতিকেজি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ৩৪ টাকা নির্ধারণ করেছে।
কিন্তু রাজধানীর খুচরা বাজারে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি বাজার ভেদে ৯০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষক কম টাকায় পেঁয়াজ উৎপাদন করলেও অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে ভোক্তার বাড়তি দরে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে।
গত বছর ডিসেম্বরে স্থানীয় বাজার স্থিতিশীল রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। জাতীয় নির্বাচনের আগে ভারতের বাজারে ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ও পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে দ্বিতীয় দফায় আগামী মার্চ পযন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ায় দেশটি।
রপ্তানি নিরুত্সাহিত করতে দেশটির সরকার প্রথমে পেঁয়াজের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তার পরও আশানুরূপ ফল না মেলায় রপ্তানি পুরোপুরি নিষদ্ধি করে।
এদিকে ঠিক তখন থেকেই দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যটি নিয়ে কারসাজি শুরু করে। নভেম্বরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। তবে দেশি জাত বাজারে আসায় দাম কিছুটা কমে ফেব্রুয়ারির শুরুতে ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে ফের দাম বেড়ে বৃহস্পতিবার কাওরান বাজারে এই পণ্যটি ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। মালিবাগ কাঁচা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা। একটু এগিয়ে রামপুরা কাঁচাবাজার ও বসুন্ধরা এলাকায় সর্বোচ্চ ১২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মালিবাগ কাঁচাবাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা সোনাই আলী বলেন, পেঁয়াজ আমরা উত্পাদন করি না। কৃষক উত্পাদন করে। তারা কত টাকায় বিক্রি করে তা আমাদের দেখে লাভ নেই। আমরা পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনি। বিক্রিও করি বেশি দামে। এখানে আমাদের অল্প লাভ করে বিক্রি করতে হয়। তিনি বলেন আমরা কারসাজি করি না। আমদানিকারক ও বড় বড় আড়ত্দাররা এক হয়ে সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ায়। তাদের ধরতে না পারলে কখনো দাম কমবে না।
মালিবাগ কাঁচাবাজারে পণ্য কিনতে আসা শাকিল বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের স্থায়ীভাবে কারসাজি করছে। কোন উপলক্ষ পেলেই পণ্যটি নিয়ে ছলচাতুরি করছে। বাড়িয়ে দিচ্ছে দাম। কখনও ভারত থেকে আমদানি বন্ধ আবার দেশে উত্পাদিত পেঁয়াজ শেষ অযুহাতে তারা দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটছে। কিন্তু এখন পেঁয়াজের ভরা মেৌসুম। এখন কেশি ২০-৩০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। কিন্তু ১০০ টাকার উপরে কিনতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ-জাপান ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (ইপিএ) নিয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন পাওয়া গেছে।
ভারতে পেঁয়াজের শুল্ক বাংলাদেশের জন্য ৮০০ ডলার, আর যুক্তরাজ্যের জন্য এক হাজার ২০০ ডলার। আমাদের সিনিয়র সচিব তিন দিন ধরে দাম কমাতে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন, আলোচনা করছেন। দু-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সদ্ধিান্ত আসবে। তখন সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।