রাষ্ট্রমালিকানাধীন পাঁচ ব্যাংক থেকে ৭০,৪৮৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকারি সংস্থাগুলো। এর মধ্যে ১৮৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে। তথ্য বলছে, ক্রমেই বাড়ছে সংস্থাগুলোর ব্যাংক ঋণের পরিমাণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজন মেটাতে বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকে সরকারি সংস্থাগুলো। কিন্তু পর্যাপ্ত লাভ না হওয়ার কারণে কেউ কেউ ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। তাছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন থেকে লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে উল্টো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী ও বেসিক ব্যাংক থেকে ২০টি সরকারি সংস্থা ৭০,৪৮৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ৪১,২৩০ কোটি টাকা ফান্ডেড এবং ২৯,২৫৫ কোটি টাকা নন-ফান্ডেড। ফান্ডেড ঋণের পরিমাণ নভেম্বরের চেয়ে ৩৭৩ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাঁচ সরকারি ব্যাংক থেকে নেওয়া সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিটিএমসি, বিজিএমসি, বিএসইসি, বিএসএফআইসি, বিসিআইসি, বিপিডিবি, ডিওয়াসা, বিওজিএমসি, বিআইডাবলিউটিএস, সিপিএ, এমপিএ, বিআইএ, বিআরটিসি, বিপিসি, টিসিবি, বিটিবি, বিআইডাবলিউটিএ , বিডাবলিউডিবি ও আরইবি।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮টি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের কাছে ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। সেগুলো হলো- বিটিএমসি, বিজেএমসি, বিএসএফআইসি, বিসিআইসি, বিআরটিসি, টিসিবি, বিএডিসি ও বিটিবি।
তথ্যমতে, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় খেলাপি বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)। সোনালী, রূপালী, জনতা, ও অগ্রণী ব্যাংকের থেকে মোট ৬৭৩.৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরমধ্যে ১৩১.৩০ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে।
এবিষয়ে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান ফারুক আহম্মেদ বলেন, আমাদের লোকসান কমে এসেছে। আশা করি, আগামীতে ঋণের পরিমাণ কমে যাবে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৩ এর তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ৪৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লোকসানে পড়েছে ১০টি। গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) এই দশ প্রতিষ্ঠানের পেছনে ২০ হাজার ৭৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে সরকার। গত অর্থ-বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসান করেছে বিপিসি। ২০২৩ সালের ২৩ মে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি লোকসান করেছে ৭ হাজার ৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের জন্য দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং সামর্থ্য অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন না করাকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর ধরে লোকসান করে আসছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটা বড় ধরনের রিভিউ বা পরিবর্তন আনা দরকার। কোনটা কোন পদ্ধতিতে রাখলে ভালো হবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ব্যক্তি মালিকানায় দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে শেয়ার অফলোড করা যেতে পারে। যাতে সরকারের পাশাপাশি জনগণের মালিকানা সৃষ্টি হয়। তিনি আরো বলেন পরিচালনা পর্ষদে শেয়ারের ভিত্তিতে জনগণের প্রতিনিধিও থাকবে। শুধু সরকারি কর্মকর্তারাই প্রতিষ্ঠান চালাবে না। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে রাখার দরকার নেই। এগুলো বেসরকারি খাতে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এসব পরিবর্তনের এখন সময় এসেছে।’