আসন্ন ৭ জানুয়ারীর নির্বাচন ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে `ডামি নির্বাচন` হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই এই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারিত হয়ে যাওয়ায় এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোন সমালোচনা, প্রতিবাদ কানে তুলতে নারাজ আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।
নির্ভরযোগ্য সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত এবং দেশের মাটিতে থেকে রাজনীতি করতে চান তারা এই ধরণের পাতানো কৌতুকের নির্বাচনের ব্যপারে আগ্রহী নন। কিন্তু দলীয প্রধানের জেদের কাছে তাদের অসহায় আত্মসমর্পন করতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত মিথ্যা কথা বলেও এই নির্বাচনের বিষয়ে কোন আগ্রহ জনমনে তৈরি করা যাচ্ছে না। বিএনপিসহ সব বিরোধীদেরকে নির্বাচনের বাইরে রেখে সরকার দলীয় কাউন্সিলের আদলে এই নির্বাচন আয়োজন করতে গিয়ে নিজের দলের মধ্যেই চরম বিভক্তি ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। ডামি প্রার্থিরা মূল নৌকার সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে সারা দেশেই। বিদেশীদের কাছে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে প্রতিভাত করার লক্ষ্যে পাতানো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলেও, দেখা যাচ্ছে সাজানো প্রতিযোগিতার এ পাতানো খেলাও নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে।
সূত্র বলছে, এই ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার ও দলকানা নির্বাচন কমিশন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন, সারাদেশে শেখ হাসিনার পছন্দের প্রার্থিদের সিলেকশন নিশ্চিত করতে ২৫% ব্যালট আগেই ভোটার বক্সে ভরে রাখার এবং নানা প্রক্রিয়ায় ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কোন ভাবেই যাতে হাসিনার পছন্দের প্রার্থিদের সিলেকশনে সমস্যা তৈরি না হয় এই জন্য প্রত্যেক ইউএনওদের ২৫ লাখ ও ডিসিদের প্রত্যেক আসনের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা হিসেবে বরাদ্ধ করা হয়েছে। পুলিশ, আনসার ও বিজিবি`র জন্যও বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এই কাজ সফলভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে তা মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সূত্রের তথ্যমতে এইসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবারের নির্বাচনে হাসিনার মনোবাসনা পূরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, এই নির্বাচনকে ইতোমধ্যে বিবিসি `এক নারীর শো` হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, যা ১ জানুয়ারী বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রতিবেদন এবং আমাদের হাতে আসা তথ্যের সমন্বয়ে এটা পরিস্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে নিজ দলীয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগ্রহপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র কিংবা ভিন্ন দলীয় অপরিচিত প্রার্থীদের মধ্যে আয়োজিত পাতানো প্রতিযোগিতার উত্তাপকে নিয়ন্ত্রণে রেখে কোন্দল মোকাবেলা করে এবং কৃত্তিম ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করে শেখ হাসিনা আবারও অবৈধ ও জনতার ম্যান্ডেটহীন একটি সরকার গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বুঝতে পারছে না, এটা ২০১৪ এবং ২০১৮ নয়। সরকারের সকল ফন্দিফিকির জারিজুরি ও কূটকৌশল মানুষ জেনে গেছে এবং এবার সরকারের এসব নস্টামি মানুষ মেনে নেবে না। ৭ জানুয়ারির চোরাই ভোটের অবৈধ সরকারকে জনগণ মেনে নেবেনা। আর বিশ্ববাসী ইতোমধ্যেই জেনে গেছে ৭ জানুয়ারির প্রহসন ও প্রতারণামূলক নির্বাচনের ফলাফল পুর্ব নির্ধারিত। তাই গণতান্ত্রিক বিশ্ব এহেন প্রতারণামূলক নির্বাচন বা এর চোরাই ফলাফলও মানবে না।
এ প্রহসনের নির্বাচনী নাটক জাতিকে অধিকতর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহাসংকটে নিপতিতঃ করবে। এখনও সময় আছে, সংবিধান মোতাবেক চলমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে ৯০ দিনের মধ্যে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজনই সকলের প্রত্যাশা।