দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ : রিজভী

0
109

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশে ধেয়ে আসছে প্রলয়ংকরী বিপর্যয়। এই অবস্থায় কার্যত দেউলিয়াত্ব ঘোষণার অপেক্ষা মাত্র। সারা দেশ ধাবিত হচ্ছে নিশ্চিত ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির দিকে। লুটপাট ও দুর্নীতি করে ব্যাংকিং সেক্টর ফোকলা করে দিয়েছে আওয়ামী লুটেরা গোষ্ঠি। বেপরোয়া ও নজিরবিহীন আওয়ামী লুটপাটে ধ্বংস হয়ে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ৯ বিলিয়ন ডলারে নিচে।

শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ১১ ডিসেম্বর একটি পত্রিকার কলামে বলা হয়েছে, ‘আইএমএফের এসডিআর ঋণ, ব্যাংকগুলোর দেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং এবং এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর বিল বাদ দিলে প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দাঁড়ায় প্রায় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কম।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এক সপ্তাহ আগে বলেছেন, আমরা বর্তমানে একেবারে তলানিতে এসেছি। আর তো নিচে নামার পথ নেই।’ আমার ৩৬ বছরের সিভিল ও পাবলিক সার্ভিসে কখনোই এমন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট প্রত্যক্ষ করিনি।” বিদেশি ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশী।

রিজভী বলেন, টাকার ঘাটতির কারণে দেশের শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন সেবা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল এক চিঠিতে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয়ের জন্য ২০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে বিনা ভোটে এবং ২০১৮ সালে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসলেও এবার আর কোনো রাখ-ঢাক নেই তাদের। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে প্রকাশ্যে আসন বাটোয়ারা করে যাচ্ছে। গোটা দেশ গোল্লায় যাচ্ছে সেদিকে ন্যূনতম ভ্রুক্ষেপ নেই। তার পরিষদবর্গ-দলদাস-আজ্ঞাবহরা ব্যস্ত কিভাবে পাতানো নির্বাচনী ম্যাচ খেললে জনগণ এবং বিদেশীদের চোখে ধুলো দেওয়া যাবে।

রিজভী বলেন, কিছু লোক অর্থপাচার করে বিদেশে গাড়ি বাড়ি ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। সিঙ্গাপুরসহ দেশে দেশে শ্রেষ্ঠ ধনীর তালিকাভুক্ত হচ্ছে। দেশে-বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছে। অন্যদিকে গরিব আরও গরীব হচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, করোনা উত্তরকালে প্রায় চার কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে। এক রিপোর্টে বলা হয়েছে বর্তমানে ৪২ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্যের যাঁতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া কারও বাসযোগ্য নেই এখন এই দেশ। একদিকে বধ্যভূমি অন্যদিকে দুর্ভিক্ষের এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে প্রতিটি মানুষকে রাজপথে নেমে সরকারের ক্ষমতায় থাকার সিলমোহরের নির্বাচন বানচাল করে দিতে হবে। এখন আর কারও ঘরে বসে থাকার পরিস্থিতি নেই। আপনাকে প্রতিবাদে নামতেই হবে।

রিজভী বলেন, সকল দল মত নির্বিশেষে সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি রাষ্ট্রীয় অর্থের বিনিময়ে খরিদ করা ‘কুইন্স পার্টি’, ভূঁইফোড় পার্টি-তৃণভোজী পার্টি-ডামি পার্টি-খুঁদকুঁড়ো পার্টি এবং বিভিন্ন দল থেকে অচ্ছুত লোকজন হায়ার করে নিয়ে কথিত নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ করার তামাশায় কেউ কোনো প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন না। ভোট কেন্দ্র্রে যাবেন না। ভোট দিবেন না। ‘আমরা আর মামুরা’ মার্কা এই নির্বাচনের প্রার্থীদের ত্যাগ করুন।

আগামীকাল বিজয় দিবসের কর্মসূচি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, সকালে জাতীয় স্মৃতি সৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ করা হবে। এরপর বেলা ১টায় নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির আয়োজনে বিজয় র‌্যালি শুরে হয়ে মগবাজার গিয়ে শেষ হবে। বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল নেতাকর্মীকে এই কর্মসূচি সফল করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।

সারাদেশে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মোট গ্রেপ্তার ৮০ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা ৪ টি, মোট আসামী ৪৩৬ জনের অধীক নেতাকর্মী, মোট আহত ১০ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মারা গেছেন ১ জন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here