দুই সন্তানের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে নিজের কথা তুলে ধরলেন নোবেলজয়ী নার্গিস

0
102

২০২৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ইরানের নার্গিস সাফি মোহাম্মদি। কিন্তু বর্তমানে তিনি কারাবন্দি। ইরানের নিপীড়িত নারীদের স্বাধীনতা দেয়া এবং মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিখ্যাত ৫১ বছর বয়সী এই সমাজকর্মীকে একাধিকবার হেনস্তা করেছে ইরানের প্রশাসন। তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। পাঁচটি অভিযোগে ইতিমধ্যেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ইরানের আদালত। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবরও জেলে বসেই পান নার্গিস। রবিবার নরওয়ের রাজধানীতে মায়ের তরফে এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করলেন নার্গিসের সন্তানেরা। মঞ্চে উঠে তেহরান কারাগার থেকে মায়ের লেখা একটি বক্তৃতা পড়ে শোনান তারা। একটি খালি চেয়ারের ওপর নার্গিসের মেডেলটি শায়িত রাখা হয়েছিলো। কিয়ানা এবং আলি রহমানি, নার্গিসের  ১৭ বছর বয়সী যমজ সন্তান বাবার সঙ্গে প্যারিসে নির্বাসিত জীবনযাপন করে, অসলো সিটি হলে গিয়ে নার্গিসের পক্ষ থেকে এই সম্মানজনক পুরস্কার গ্রহণ করেছে।

কন্যা কিয়ানা তাদের মায়ের নামে নোবেল শান্তি পুরস্কারের বক্তৃতার প্রথম অংশটি পড়েছিলেন এবং তার ভাই আলি বাকি অংশটি পড়ে শোনান। বক্তৃতায় নার্গিস লিখেছেন, “আমি একটি কারাগারের উঁচু, ঠান্ডা দেয়ালের আড়াল থেকে এই বার্তাটি লিখছি। আমি একজন মধ্যপ্রাচ্যের নারী এবং এমন একটি অঞ্চল থেকে এসেছি যেখানে সমৃদ্ধ সভ্যতা থাকা সত্ত্বেও এখন যুদ্ধের মধ্যে নিমজ্জিত। সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থার আগুন জ্বলছে সেখানে। কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাসী যে, ইরানের মাটিতেও স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের আলো উজ্জ্বলভাবে জ্বলবে। সেই মুহূর্তে, আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের বিজয় উদযাপন করব। জনগণের সঙ্গে বিজয়ের গান গাইব। ইরানের রাস্তায় সেই উদযাপন সারা বিশ্বে অনুরণিত হবে। ইরানের জনগণ তাদের অধ্যবসায়ের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা ও স্বৈরাচারকে উচ্ছেদ করবে। কোন সন্দেহ নেই-এটি নিশ্চিত হবেই। ”নরওয়ের রাজা হ্যারাল্ড ও  রানী সোনজা এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ারওম্যান বেরিট রেইস-অ্যান্ডারসেন, মোহাম্মদীর “মানবাধিকার এবং শক্তিশালী নাগরিক সমাজের সমর্থনে জীবনব্যাপী সংগ্রাম” এর কথা উল্লেখ করেছেন। নার্গিসের স্বামী তাগি তাদের সন্তানদের সম্মানজনক পুরস্কার গ্রহণ করার সময়ে দর্শকদের আসনে ছিলেন। তিনি ১১ বছর ধরে তার স্ত্রীকে দেখতে পাননি। তার সন্তানরা প্রায় আট বছর ধরে তাদের মাকে দেখেনি। দেশের কঠোর হিজাব  আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে গত বছর ২২-বছর-বয়সী মাহসা আমিনির মৃত্যুর কারণে সৃষ্ট বিক্ষোভে মোহাম্মদী একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। এর মধ্যেই  ইরানি কর্তৃপক্ষ আমিনির পরিবারের সদস্যদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ মানবাধিকার পুরস্কার-  ‘সাখারভ পুরস্কার’ গ্রহণ করার জন্য ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নার্গিস মোহাম্মদী ১৯তম নারী যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছেন এবং ২০০৩ সালে মানবাধিকার কর্মী শিরিন এবাদির পরে দ্বিতীয় ইরানি নারী।

সূত্র : হিন্দুস্থান টাইমস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here