চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইউরিয়া সারের আমদানি নিরবচ্ছিন্ন রাখার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান। তবে তার এই চেষ্টা কোনো কাজেই আসছে না। কারণ ব্যাংকে মার্কিন ডলার নেই। আর এই সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই পর্যাপ্ত তহবিল। বিসিআইসির তহবিল সার কিনতেই শেষ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিসিআইসির চেয়ারম্যান শিল্প, কৃষি, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকর সাথে আন্তঃমন্ত্রণালায় সভা করতে চান।
বিসিআইসির চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছেন অর্থ ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে। চিঠিতে চলতি অর্থ বছরের ইউরিয়া সারের আমদানি নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়ম হার ও ঋণের দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আয়োজনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ বৃদ্ধি করতে না পারলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের যারা আমদানির সাথে জড়িত তাদের ক্ষেত্রে ডলারের সংকট কোনোভাবেই দূর হবে না। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো কোনোভাবেই ডলারের প্রকৃত সংকট দূর করা সম্ভব হবে না। সরকানি ব্যাংকগুলো ১৩০ টাকায় ডলার কেনার ক্ষমতা রাখে না। ফলে তারা এলসি খোলার জন্য ডলার যোগাড় করতে পারছে না।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারি সমর্থনপুষ্ট ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাচার হওয়া ডলার ফেরত নিয়ে আসলে ডলারের সংকট কমে আসতো বলেও মনে করছেন তারা।
অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বাংলা আউটলুককে বলেন, সরকারকে দেশের বৈদেশিক প্রকল্পের অর্থ ঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট কাটবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানিতে ডলারের সংকটের প্রভাবে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েবে। দেশে ঠিকভাবে সার আমদানি করতে না পারলে অবশ্যই কৃষি খাতে এর সূদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বাংলা আউটলুককে বলেন, সরকারের সমর্থিত লোকজন ও প্রতিষ্ঠানগুলো দেশ থেকে বিদেশে ডলার পাচার করে নিয়ে গেছে। তারা আর সেই ডলার কি দেশে নিয়ে আসবে? তবে কেউ ভাববে এ সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে, তাই দেশে পাচার করা অর্থ ফেরত নিয়ে আসতে পারে। বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য ইমেজ সংকটের ব্যাপারটা এখনও রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকের সুদের হার আরো বাড়ালে আর বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতকে আরো রেগুলেট করতে পারলে ডলারের সংকট কমে আসবে। এর সঙ্গে সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারকদের দেশের মূল্যস্ফীতি কমানোর নিদের্শনা দিতে হবে।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখ্ত বাংলা আউটলুককে বলেন, ডলার সংকটের কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠান আমদানির ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ে যাচ্ছে। তখন সরকারকেই বেইলআউট করার জন্য বন্ড ইস্যু করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে। ফলে ভর্তুকির পরিমাণটা ক্রমশ বাড়ছে। যা সরকারের বাজেট ব্যবস্থায় সংকুলান করার সুযোগ নেই।
বিসিআইসি সার আমদানির ক্ষেত্রে পাঁচটি জটিলতার কথা বলেছে। যার মধ্যে রয়েছে -বিসিআইসির নিজস্ব উৎপাদন ও জি-টু-জি চুক্তির আওতায় আমদানির মাধ্যমে সারের যোগান ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। চলতি অর্থবছরে জি-টু-জি চুক্তির আওতায় ৯.৯০ লক্ষ মেট্রিক টন ও কাফকো বাংলাদেশ হতে ৫.৫০ লক্ষ মেট্রিক টনসহ মোট ১৫.৪০ লক্ষ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিসিআইসি। লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে কাফকো বাংলাদেশ হতে ৫.৫০ লক্ষ মেট্রিক টনের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি এবং জনতা ব্যাংক পিএলসির মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৩.৬ লক্ষ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের এলসি স্থাপন করা হয়েছে। অবশিষ্ট আরও ১.৯০ মেট্রিক টন সারের এলসি চলতি বছরের জুনের মধ্যে স্থাপন করতে হবে। অন্যথায় বিসিআইসি এলসি খুলে সার নিয়ে আসতে পারবে না। এছাড়াও আরও চারটি জটিলতার কথা বলেছে বিসিআইসি।