টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ প্রদান বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিব সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে ৭৮ জন সচিব এবং বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের ব্যাংকের পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তামূলক পরিস্থিতিতে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি সাম্প্রতিককালে যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অস্থিতিশীল বিনিময় হার, ব্যাংকিং খাতে ক্রমবর্ধমান শ্রেণীকৃত ঋণ সমস্যা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর সৃষ্ট চাপ। এ চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবেলায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্যও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুসৃত সংকোচনমুখি মুদ্রানীতি ও সংকোচনমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার জন্য দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সেপ্টেম্বরে তা কমে ৭১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে স্থিতি কমেছে ৫৭ হাজার কোটি টাকা।
দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপসমূহ- নীতি সুদহার (পলিসি রেট) বৃদ্ধি, রিজার্ভ মানি টার্গেটিং হতে সুদহার টার্গেটিং কাঠামোতে রূপান্তর করে একটি সুদহার করিডোর চালুকরণ, আমানত ও ঋণের সুদহার সীমা উত্তোলন ও এর বাজারমুখীকরণ টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ প্রদান স্থগিতকরণ, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স অন্তঃপ্রবাহ বৃদ্ধির কার্যকর ব্যবস্থাকরণ, বৈদেশিক মুদ্রার একক বিনিময় হার চালুকরণ, আমদানি মূল্য যাচাইসহ বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে তদারকি বৃদ্ধি এবং রিজার্ভ হতে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের আমদানি ব্যয় মেটানো, প্রভৃতি পদক্ষেপ বর্তমানে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
উপরন্তু, মার্কিন ডলার বিক্রয় করে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩ সময়কালে প্রায় ৫.০ বিলিয়ন ডলার বিক্রয়) স্থানীয় মুদ্রা বাজারে তারল্য সংকোচন, সরবরাহ সাইডের সীমাবদ্ধতাসমূহ সহজীকরণের লক্ষ্যে কৃষি, আমদানি-বিকল্প শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের জন্য বিভিন্ন তহবিল স্কিমের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে জুন ২০২৪ শেষে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের সংকোচনমুখি মুদ্রানীতিতে নিম্নরূপ পদক্ষেপ উল্লেখ করা হয়েছে। পলিসি রেট তথা ওভারনাইট রেপো সুদহার বিদ্যমান ৭.৭৫ শতাংশ হতে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৮.০০ শতাংশে।
গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশে। গত এক যুগের মধ্যে এটা সর্বোচ্চ। শুধু খাদ্য মূল্যস্ফীতিই নয়, বেড়েছে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও। অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির গড় ৯.৯৩ শতাংশ, যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহার পুনঃনির্ধারণ করেছে। ব্যাংকসমূহের তারল্য ব্যবস্থাপনা অধিকতর কার্যকর করতে নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) বিদ্যমান ৯.৭৫ শতাংশ হতে ২৫ বেসিস পয়েন্ট হ্রাস করে ৯.৫০ শতাংশে এবং করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৫.৭৫ শতাংশ হতে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৬.৫০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ; টাকা/ডলার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে বিনিময় হার নতুন ব্যবস্থায় প্রবর্তন করা হয়। অধিকতর উৎপাদনমুখী খাত যেমন : কৃষি, আমদানি-বিকল্প খাতে প্রয়োজনীয় ঋণের যোগান অব্যাহত রাখা। সুতরাং, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত নীতি পদক্ষেপসমূহ, বিশ্ব বাজারের পণ্য মূল্যে নিম্নমুখী গতিধারা, আমন ধানের উৎপাদন আশানুরূপ হওয়া এবং শীতকালীন সবজির সরবরাহ বৃদ্ধির সূত্রে আগামী মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।