৭০ হাজার আসনে ভর্তি নিয়ে হবে মূল লড়াই * ভালো ফল করেও অনেকেই প্রত্যাশিত প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাবেন না : ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান
নানা প্রতিকূলতার মাঝে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করেও পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নামিদামি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলিয়ে আসন সংখ্যা রয়েছে ৭০ হাজারের মতো। কিন্তু এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন ছাত্রছাত্রী। ফলে কঠোর পরিশ্রম করে এইচএসসিতে ভালো ফল করলেও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। যদিও দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি-বেসরকারি মিলে আসন রয়েছে ১৩ লাখের মতো। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই থাকে সবার পছন্দের শীর্ষে। এর জন্য প্রতিযোগিতাও বেশি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোয় আসনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। বাকি আসন বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গেল বছর এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। সে তুলনায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন প্রায় এর অর্ধেক। তারপরও ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। শিক্ষাথীরা বলছেন, জিপিএ-৫ অর্জন এবার অনেক কষ্টসাধ্য ছিল। ঘাম ঝরানো পড়াশোনার এই ফলপ্রাপ্তির পরও যদি ভালো মানের বিদ্যাপীঠে ভর্তির সুযোগ না হয়, তাহলে তাদের স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে। কারণ, মানসম্পন্ন ও পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির লালিত ইচ্ছা নিয়েই এইচএসসিতে ভালো ফল আনার চেষ্টা করেছেন তারা। এবার জিপিএ-৫ পেয়ে রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজ থেকে পাশ করেছেন নাশিতা মালিক প্রিয়ন্তি। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ভালো ফল করা এমন অনেক শিক্ষার্থীও ভর্তি পরীক্ষায় ছিটকে পড়েন। আমাদের সামনে কঠিন ভর্তিযুদ্ধ অপেক্ষা করছে। বিষয়টি সামনে রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, উচ্চশিক্ষায় ভর্তি প্রতিযোগিতা বাড়বে দেশের শীর্ষস্থানীয় পাবলিক ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজে। কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য পছন্দের প্রতিষ্ঠানে আসনসংখ্যা খুবই সীমিত। এ অবস্থায় কঠিন ভর্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাদের ‘সোনার হরিণ’ নামের আসনটি অর্জন করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুয়েটে আবেদনের জন্য এসএসসিতে কমপক্ষে জিপিএ-৪ এবং এইচএসসিতে জিপিএ-৫ থাকতে হবে। এছাড়া মেডিকেলের আবেদনের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি দুটো মিলে সর্বনিম্ন ৯ পয়েন্ট থাকতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে আবেদনের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি দুটো মিলে কমপক্ষে ৮ পয়েন্ট থাকতে হবে। এছাড়া মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তির আবেদনের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি দুটো মিলে কমপক্ষে ৭.৫ পয়েন্ট থাকতে হবে (তবে কোনোটিতে ৩ পয়েন্টের নিচে প্রযোজ্য নয়)। গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের জন্য বিজ্ঞানে এসএসসি ও এইচএসসি মিলে ৮ পয়েন্ট থাকতে হবে (তবে কোনোটিতেই ৩.৫০-এর নিচে নয়)। মানবিকে আবেদনের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি মিলে ৬ পয়েন্ট থাকতে হবে (তবে কোনোটিতে ৩ পয়েন্টের নিচে নয়)। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তির আবেদনের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি মিলে কমপক্ষে ৬.৫ পয়েন্ট থাকতে হবে (তবে কোনোটিতে ৩.০ পয়েন্টের নিচে নয়)।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তির শর্ত অনুযায়ী সাধারণত জিপিএ ৩ দশমিক ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা আবেদনের সুযোগ পান। এবার (২০২৩ সালে) জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ৯২ হাজার ৫৯৫ জন ছাড়াও জিপিএ-৫ এর নিচে (৩.৫ পর্যন্ত) শিক্ষার্থী আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৭৮৪ জন। তবে ৭০ হাজার আসনের জন্যই মূলত এসব শিক্ষার্র্থীর মধ্যে লড়াই হবে। এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশ করেছেন ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিষয়ে ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ তাদের প্রথম পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন। বাকি ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের দ্বিতীয় পছন্দের প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন।
তিনি বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার মান আরও বাড়াতে হবে। মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের খুবই সংকট আছে। যাতে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহ দেখান। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে তিনি জানান, এ বছর এককভাবে হবে কি না, এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে গুচ্ছভুক্ত ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে, এটা নিশ্চিত। বাকি ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি, চবি, রাবি, জাবি) বিষয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
ইউজিসির তথ্য অনুসারে, উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্ধশতাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫২ হাজার আসন রয়েছে। এছাড়া ১০২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে সোয়া ২ লাখ। তবে এগুলোর মধ্যে ১০-১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে ডিগ্রি পাশ ও স্নাতকে ১০ লাখের বেশি আসন আছে প্রথম বর্ষে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা নির্ধারিত নেই।
মেডিকেল ও ডেন্টালে আসন আছে প্রায় ১৩ হাজার এবং দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (গাজীপুরের আইইউটি ও চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন) ৮০০টি আসন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনেকে উচ্চমাধ্যমিকে পাশের পর বিশেষায়িত কারিগরি শিক্ষা নিতে চান। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০, ছয়টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে আসন আছে ৫ হাজার ৬০০টি। ১৪টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিক্যাল কলেজে ৬৬০টি আসন আছে। যারা ইসলামি বিশেষজ্ঞ হতে চান, তাদের জন্য ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফাজিল (ডিগ্রি) ও অনার্সে ভর্তির জন্য ৬৪ হাজার ৫২৯ আসন আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৭টি সরকারি কলেজে রয়েছে প্রায় ২৪ হাজার আসন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন যতই থাকুক না কেন, শেষ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৫-৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৭টি সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ এবং কয়েকটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেও শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে চান। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে আসন আছে প্রায় ৬০ হাজার। কেবল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোয় ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় না। আবেদন করলে ফলাফলের ওপর নির্ভর করে ভর্তির সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা।