মিনার রশিদ
বাংলাদেশের নদীতে অনেক মাছ রয়েছে – এই কথাটি যেমন সত্য তেমনি বাংলাদেশে অনেক ইন্ডিয়ার দালাল রয়েছে সেই কথাটিও সমভাবে প্রযোজ্য। একটু ভালো করে তাকালেই তা টের পাওয়া যায়। বাংলাদেশের নদীতে মাছের সংখ্যা আর এদেশে ইন্ডিয়ার দালালদের সংখ্যা- এর মধ্যে কোনটি বেশি তা রীতিমত গবেষণার দাবি রাখে। কোথায়ও একটু খুদকুঁড়া দেখলেই আশেপাশে এরা কিলবিল করতে থাকে।
বিশেষ এই দালাল প্রজাতিটি আগে একটু পানির গভীরে বিচরণ করত, কিছুটা রাখঢাক রাখত। এখন পানির উপরেই স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়ায়, প্রকাশ্যেই নিজেদের কীর্তির কথা বলে বেড়ায়। এরশাদের গার্লফ্রেন্ডদের মত এই সব দালালদের মাঝেও এক ধরণের গর্ব কাজ করে। এরশাদের জনৈক গার্লফ্রেন্ড (যিনি অন্য এক অভাগার সাথে তখনও বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন) গর্ব করে বলতেন, আমি কোনও ফকিরের বিছানায় শুই নাই, শুয়েছি প্রেসিডেন্টের বিছানায়। দালাল শিরকূলমণির উচ্চারণে একই অহম, সেই একই তৃপ্তি, “ইন্ডিয়াকে যা দিয়েছি তা কোনোদিন ভুলতে পারবে না!” কিংবা আমরা ইন্ডিয়াকে বলে এসেছি, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে। এরকম দালাল বচন শত শত রয়েছে!
পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই এদেশে ইন্ডিয়ার দালালদের এই ব্রিডিং শুরু হয়েছিল। এতদিন জেনে এসেছিলাম যে আগরতলা মামলাটি ছিল একটি ষড়যন্ত্র মূলক মামলা। কিন্তু আওয়ামীলীগ নেতারাই এখন বলছেন যে ওটা ষড়যন্ত্র নয়-এরকম একটা যোগাযোগ নাকি আগে থেকেই ছিল! কাজেই প্রশ্ন জাগে যে, শত্রু দেশের সাথে এভাবে হাত মেলানো একজন অবিশ্বস্ত ব্যক্তিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে না দিয়ে তখনকার সামরিক শাসকগণ কি আসলেই অন্যায্য কাজ করেছিল? তাহলে কি পিণ্ডির হাত থেকে মুক্ত হয়ে দিল্লির জিঞ্জির পরার জন্যেই এদেশের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিরা এই সব স্বাধীনতা স্বাধীনতা (পুতুল পুতুল) খেলার আয়োজন করেছিলেন??
আওয়ামী গোষ্ঠীর এই মতলব প্রথমেই ধরতে পেরেছিলেন মওলানা ভাসানী। জীবদ্দশায় তিনি তাঁর এই সন্দেহটি সভা সমাবেশে উচ্চারণ করে গেছেন। মেজর জলিল একারণেই কি প্রশ্ন রেখেছিলেন যে ইসলামপন্থীরা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ইন্ডিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে যে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, তা অমূলক ছিল না? ১৯৭১-১৯৭৫ সালের সেই অপূর্ণ কাজটিকেই পূর্ণতা দিয়েছে ২০০৮ থেকে বর্তমান সময়ে?
একটা প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সেই দেশের কোনও নাগরিকের পক্ষে এই ধরণের রাষ্ট্রবিনাশী বা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড যে কোনো বিচারেই অগ্রহণযোগ্য। ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো যে রাজনৈতিক শক্তি তখনকার নিজের দেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এরকম অবিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়েছে, সেই একই শক্তি ১৯৭১-১৯৭৫ সালে নব্য প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রটির পক্ষেও বিশ্বস্ত থাকতে পারে নাই। আর আগে কিছুটা রাখঢাক রাখলেও এখন সেটিও উঠিয়ে দিয়েছে! নিজের জনগণ ও তাদের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি এই গাদ্দারী আওয়ামীলীগের রক্তকণিকায় মিশে আছে!
ইতোমধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা দিয়ে অনেক জল প্রবাহিত হয়েছে। পাকিস্তানের প্রথম দিকে জন্ম নেওয়া সেই দালাল চক্রের তৃতীয় কিংবা চতুর্থ প্রজন্মের ব্রিডিং সম্প্রসারিত হয়েছে।
এই সব দালালদের ডিএনএ-র কাঠামো সহ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জাতির সামনে যারা তুলে ধরছেন, তাদের মধ্যে পিনাকী ভট্টাচার্যের নামটি প্রথম দিকেই উঠে আসবে! এক্ষেত্রে তিনি নিজে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় তাঁর এসব উচ্চারণ/পর্যবেক্ষণ অন্য রকম গুরুত্ব পাচ্ছে। অনেকটা তসলিমা নাসরিন নিজের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলে বাংলাদেশ তথা পুরো উপমহাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়কে যে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছিলেন, পিনাকী ভট্টাচার্য্য তার সম্প্রদায়ের ইনএপ্রোপ্রিয়েট রাজনৈতিক আচার ও আচরণ সম্পর্কে (ধর্মীয় নহে) কিছু অপ্রিয় সত্য তুলে ধরে একইরকম বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছেন! এটা অনেকটা প্রকৃতির প্রতিশোধের মত ব্যাপার হয়ে পড়েছে!
তবে তসলিমা নাসরিনের সাথে পিনাকী ভট্টাচার্যের পার্থক্যটি স্পষ্ট! তসলিমা নাসরিন যেখানে তার বুদ্ধির স্থূলতা এবং খোলামেলা যৌনতা নিয়ে সহজেই আনন্দবাজার গ্রুপের মত ইসলামোফোবিক হিন্দুত্ববাদী গ্রুপের ক্রীড়নক হয়ে পড়েছিলেন সেখানে পিনাকী ভট্টাচার্য্য অনেকটা নিজেই মুসলিম সম্প্রদায়ের ঘুমন্ত সত্ত্বাকে জাগিয়ে দিচ্ছেন, কড়া নাড়ছেন অনেকটা নকিবের মত! মুসলমান সম্প্রদায়ের পক্ষে এমন কথা বলেন যা অনেক মুসলমান লেখক বা বুদ্ধিজীবী উচ্চারণেরও সাহস করেন না! বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করতে অক্ষম অনেক মুসলমান লেখকও তাকে খোমেনি বা বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের রাহবার হিসাবে আখ্যা দিতে চান বা এই নামে ডেকে এক ধরণের পুলক অনুভব করেন!
তবে মুসলমান সম্প্রদায়ের পক্ষে লিখতে গিয়ে এই ভূ-খন্ডের হিন্দুদের স্বার্থের বিরুদ্ধে তিনি কিছু লিখেছেন বা হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন, সনাতন ধর্মকে খাটো করেছেন, এরকম প্রমাণ একটাও পাওয়া যাবে না! এখানেই পিনাকী ভট্টাচার্যের বিশেষত্ব। তিনি বরং অখন্ড ভারতের ভাবালুতা থেকে বের হয়ে প্রকৃত বাংলাদেশী হওয়ার উপায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাতলে দিয়েছেন। তিনি হিন্দুত্ববাদ যা অখন্ডভারতবাদের সাথে একাকার হয়ে পড়েছে সেটার চরম বিরোধী, কখনোই হিন্দুদের বিরোধী নন! তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে শেখ হাসিনা বা তার লেসপেন্সাররা অহিন্দু হয়েও হিন্দুত্ববাদী আর গয়েশ্বর, নিমাই এবং আরও অনেকে হিন্দু হয়েও হিন্দুত্ববাদী নন।
একটা কর্নার থেকে সেই পিনাকী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেই র-এর এজেন্ট হওয়ার অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে!! বিষয়টি শুধু কৌতূহলোদ্দীপক নয়, পুরু মাথা গুলিয়ে দেওয়ার মত! চুন খেয়ে মুখ পুড়েছে কাজেই এখন দই দেখলেও ভয় লাগে! তাছাড়া ‘সাবধানের মার নেই’ -বেনেফিট অব ডাউটটি এই বেলায় সূক্ষ্মভাবে কাজে লাগাতে চান!
দালাল তৈরির জন্যে ইন্ডিয়া বা ‘র’ এর কিছু তরিকা রয়েছে।
দুই বোনকে এতিম বানানোর সুবন্দোবস্ত যারাই করেছিল, তারাই আবার ছয় বছর একান্তে আশ্রয় দিয়ে নিজেদের গুণমুগ্ধ করে রেখেছে এবং বশংবদ করে ফেলেছে। কারণ এতিম না হলে এই সুযোগটি মিলত না, জিও-পলিটিক্যাল এই এসেটটি তৈরি হতো না! অনুমিত হচ্ছে, বাংলাদেশে লেন্দুপ দর্জি তৈরির প্রোজেক্টটি ছিল অর্ধ শতাব্দীর। ১৬ই আগষ্ট ১৯৭৫ এ সমর সেনের সাথে সদ্য প্রেসিডেন্টের পদে আসীন মোশতাক আহমেদের সেই হাস্যোজ্জল ছবিটি অনেক কথা বলে, ভবিষ্যতে আরও বলবে।
এর মাধ্যমে ইন্ডিয়া লেন্দুপ দর্জির চেয়েও বড় দর্জি/দালাল এদেশে তৈরি করে ফেলেছে! এদেশের মধুর ডিব্বাটি ইন্ডিয়া তার করায়ত্তে নিয়ে নিয়েছে। এখন মৌমাছির অভাব হবে না! এদেশের জনৈক অতিরিক্ত সচিব প্রমোশনের পর নিজের বাবা মা ভাই সন্তানদের সাথে নিয়ে কাঙ্ক্ষিত মাজারে গিয়ে কৃতজ্ঞতার তৈল সিঞ্চন করে এসেছেন এবং সেটা ঘটা করে সামাজিক মাধ্যমে নিজেরাই জানিয়েছেন। এতে পুরো পরিবার লজ্জা অনুভব তো দূরের কথা বরং পুলক বা গর্ব অনুভব করেছেন! এদের কাছে নিজেদের আত্মসম্মান বা দেশের স্বার্থ বা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব গৌণ। গর্বের সেনাবাহিনীর প্রধান হওয়ার জন্যে নাকি ১৮ পাতার চেকলিস্ট ফিলাপ করতে হয়। বিবেককে বন্ধক রেখে যিনি কারেক্ট জায়গায় ক্লিক মারতে পারেন তিনি সেনাপ্রধান হন, যারা এই দৌড়ে পিছিয়ে পড়েন তারা বের হয়ে কিছুটা অনুশোচনা এবং কিছুটা হতাশা থেকে এসব কথা বলে দেন। এরকম অনেক রথীমহারথী মীরজাফর হওয়ার জন্যে লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে।
ফসল (দালাল) ফলানোর এমন মাহেন্দ্রক্ষণে নিজের এত বড় সর্বনাশ করে পিনাকীর মত এরকম ভয়ানক এজেন্টের কী দরকার পড়েছে? জনাব তারেক রহমানের সাথে পিনাকীর বয়সের পার্থক্য তেমন না। জনাব রহমানের জীবদ্দশায় প্রধানমন্ত্রী হওয়া পিনাকীর জন্যে অসম্ভব। বাকি থাকে নিধিরাম সর্দার হিসাবে সর্বোচ্চ প্রেসিডেন্ট পদে আরোহণের সম্ভাবনা! চিন্তার খাতিরে ধরে নিলাম তিনি সর্বোচ্চ প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেন! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে যা করতে পারলো না, তা প্রেসিডেন্ট পিনাকীকে দিয়ে কতটুকু সম্ভব হবে? কাজেই এরকম একটি অসম্ভব চিন্তা করে তিনি ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে যে বুদ্ধি বৃত্তিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ সৃষ্টি করছেন তাতে বাঁধা দান বা তা ব্যাহত করা কতটুকু বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে?
পিনাকী ‘র’ এর দালাল হলে আরও অনেক কুসুম কুসুম বা মুখরোচক বিরোধিতা করতে পারতেন যেখানে হিন্দুত্ববাদের এত বড় ক্ষতি হতো না! দালাল বানানোর অনেক সহজ পথ বাদ রেখে এই কঠিন পথ (পিনাকীর ভাষায় নিজের হাছিনায় বাঁশ দেওয়ার) কেন ‘র’ বেছে নিবে?
কুংফু-কারাতে নাকি আক্রমণকারীর আক্রমণের শক্তিটুকুই তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে জনগণের সহজ ধারণাটিকেই তাদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্যে ব্যবহার করা হয়। কাজেই পিনাকী ভট্টাচার্য্য ‘র’ এর দালাল এই বয়ানটি চেতনার এক অতি বড় আবিষ্কার বলেই মনে হয়। যে ভদ্রলোক ইন্ডিয়ার এক নম্বর মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে তাকে যদি কৌশলে ইন্ডিয়ার দালাল হিসাবে প্রচার করা যায় তাহলে এর মাজেজাই অন্য রকম হবে! আর এই বয়ান ছড়ানোর জন্যে যদি সরকার বিরোধী জাতীয়তাবাদী ঘরানার বা এই মানসিকতার/ পরিচিতির কাউকে পাওয়া যায় তবে সোনায় সোহাগা!
ফ্যাসিবাদের সমর্থক ধর্মীয় গোষ্ঠী (যারা ইসলামের গোঁড়া কেটে আগায় পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা করেন) পিনাকীর ধর্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়!! সরকারের ল্যাসপেন্সাররা পিনাকীর বিরুদ্ধে এই প্রচারণাটি কাজে লাগান! সরকারের বিরোধী বা ফ্যাসিবাদের বিরোধী কেউ কেউ এই প্রচারণায় হাওয়া দেন! এরা কী এটা বুঝে করেন কিংবা না বুঝে করেন সেটা স্পষ্ট নয়!
মজার ব্যাপার হলো, ডাক্তার জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে আমাদের দেশে যে ধর্মীয় গ্রুপটি উচ্চকণ্ঠ হয়েছিলেন সেই একই গ্রুপটি পিনাকী ভট্টাচার্যের ধর্মবিশ্বাস নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করেন। এদের ধর্মবোধটিও পিকিউলিয়ার! মিজানুর রহমান আজহারি কেন মেয়েদের মুখ খোলা রাখাকে ইসলামে অনুমোদিত মনে করেন তা নিয়ে আকাশ পাতাল গরম করে ফেলেন। কিন্তু নিজেরা আবার চুল খোলা মহিলা অফিসারকে মসজিদের ভেতরে চেয়ারে বসিয়ে নিজেরা পায়ের নিচে মেঝেতে বসে পড়েন। পিনাকীকে ঘায়েল করতে শাহবাগি অতীত নিয়েও খোঁচা মারা হয়। যদিও শাহবাগের পক্ষে তাঁর নিজের ব্যক্তিগত যে কন্ট্রিবিউশান ছিল (তখন পিনাকীকে দশ হাজার মানুষও চিনত না) এখন শাহবাগের বিরুদ্ধে তাঁর সেই কন্ট্রিবিউশান হাজারগুণ কেন, লক্ষ গুণ বেড়ে গেছে!
তিনি কিছু নতুন শব্দ বা বয়ান তৈরি করেছেন যা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে। শুধু জয়বাংলা শব্দটিকে নয় – এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ভাবধারাকে আসলেই তিনি জয়বাংলা করে দিয়েছেন! এম আর আখতার মুকুলের বিচ্ছু বাহিনীর চেয়ে পিনাকীর ক্ষুদ্র ভ্রাতা এবং ভগিনীগণ সৃষ্টি হয়েছে। এই ডিজিটাল বাহিনী যে কারও উপরে ভীমরুলের মত আক্রমণ করতে পারে! এই বাহিনী মুহূর্তেই সোহেল রানার মত হিরোকে কয়েক মুহূর্তেই জিরো বানিয়ে দিতে পারে। সোহেল রানার পরিণতি দেখে আলমগীর সাহেবও চুপ মেরে গেছেন।
হাতি থেকে পিঁপড়া – পিনাকী একক হাতে সবই মারেন। গুজরাটের কসাই মোদি থেকে কলকাতার চামচিকা, সামনে পড়লে কাউকেই ছাড়েন না। ঢাকার কাডাল রাণী থেকে বোট ক্লাবের মক্ষ্মী রাণী কাউকেই স্পেয়ার করেন না। মাঝখানে বেজি, শিয়ালদের মাথায় তুলে আচ্ছামত আছাড় দেন। পিনাকী ভট্টাচার্যকে যারা পছন্দ করেন তারা একারণেই করেন, যারা অপছন্দ করেন তারা একারণেই করেন।
তবে এদের মধ্যে অনেকেই ভাইরাল হওয়ার ধান্দায় পিনাকীকে এই খোঁচাটি মারেন! পিনাকীর বিরুদ্ধে এই বিদগ্ধজনের নানা মন্তব্য এবং তার পেছনের যুক্তি সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।এনালগ জমানাতে খ্যাতির যে মোহ কাজ করত ডিজিটাল জমানায় তা ভিন্ন মাত্রা পরিগ্রহ করেছে। এখানে যে সংযম, যে আত্মনিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার তা অনেকের বেলায় অনুপস্থিত দেখা যাচ্ছে। অনেকেরই কষ্টদায়ক প্রচেষ্টা, যেকোনোভাবেই আলোচনায় থাকা!
আসলে বিতর্ককে উস্কে দিতে নয়, তা চিরতরে বন্ধ করতেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। কোনও কনফ্লিক্ট দেখা দিলে আমরা নিরপেক্ষ হয়ে যাওয়াকে নিরাপদ মনে করি। “বিবদমান দুপক্ষই সঠিক”, “কেন নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করছে”- এই ধরণের মন্তব্য এসব আগুনকে না নিভিয়ে আরও বাড়িয়ে দেয়। কারণ আগুনের খাবার হিসাবে দাহ্য পদার্থ থেকে যায়। কাজেই এসব কনফ্লিক্টের সময় (যেমন ইলিয়াস বনাম জ্যাকব মিল্টন/নাগরিক টিভি, পিনাকী বনাম তাজ হাশমী বা অন্যরা) আমরা যদি তাড়াতাড়ি কে সঠিক, কে বেঠিক তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করি, তবে সেই আগুন দাহ্য পদার্থের অনুপস্থিতিতেই নিভে যাবে।
বৃক্ষ তোর নাম কি?
ফলেই পরিচয়!
এই হিসাবটি অনেক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রফেসরগণ কষতে না পারলেও কথিত ফোর পাশ জনগণ নিমিষেই কষে ফেলে!
(এই অভিমত লেখকের ব্যক্তিগত)
লেখক: মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, লেখক ও গবেষক