‘একতরফা’ নির্বাচনের তপশিল বাতিল না হলে ‘গণজাগরণ গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পল্টন মোড়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মঞ্চের অন্যতম শীর্ষনেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এই হুঁশিয়ারি দেন।
এর আগে একতরফা তপশিল বাতিলসহ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে অষ্টম দফার ধারাবাহিক অবরোধ কর্মসূচি উপলক্ষে বেলা সাড়ে ১১টায় গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে বিজয়নগর-তোপখানা সড়কে মিছিল শেষে পল্টনে মোড়ে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
সাইফুল হক বলেন, ‘সরকারকে বলছি, এখনও সময় আছে এই নির্বাচনী খেলা বন্ধ করুন। ইতিহাস থেকে কেউ কখনও শিক্ষা নেয় না। যদি সোজা পথে না হাটেন তাহলে জনগণ যে জেগে উঠেছে তাতে আপনারা ৭ তারিখ পর্যন্ত যেতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। মানুষ রাজপথে দাঁড়াবে, জেগে উঠবে, প্রতিবাদ করবে। প্রতিরোধের টেউ প্রতিদিন এখন শক্তিশালী হবে…গণজাগরণ গণঅভ্যুত্থানের একটি রাস্তা তৈরি করবে। গণতন্ত্র মঞ্চ রাজপথে আছে, রাজপথে আপনাদের সাথে নিয়ে বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত সেই লড়াইটা আমরা চালিয়ে যাব।’
তিনি বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অনতিবিলম্বে সরকারকে বলা উচিত দেশকে একটা বিপদের মধ্যে দিয়ে কোনোভাবে তারা যেতে দিতে পারেন না। আগামী নির্বাচনের পায়তারা গোটা দেশকে বিপদের মধ্যে ফেলে দেবে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হবে পরিষ্কার করে বলা, এই নির্বাচনের দায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নেওয়া সম্ভব না। সরকারকে আজকেই এই কথাটা পরিষ্কার করে বলে দেওয়া দরকার। তারা (ইসি) কী করতে পারে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে? তারা যেটা করতে পারে এ রকম একটা সংঘাত-সংর্ষষের নির্বাচনের দায় না নিয়ে, দেশকে বিপদে ফেলার দায় না নিয়ে, দেশকে গৃহযুদ্ধের ঠেলে দেওয়ার দায় না নিয়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব থেকে তারা (ইসি) সরে যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ… আপনাদের হাতে আর হয়তো একদিন-দুই দিন বা কয়েকদিন সময় আছে…. নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করেন। দেশকে বিপদাপন্ন করে, সাধারণ জনগণ যেখানে এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, সকল বিরোধী দল যেখানে এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। এ রকম একটা মিথ্যা মিথ্যা নির্বাচনের দায় আপনারা কেন নেবেন? সেজন্য এই কথাটা বলতে চাই, আপনারা দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালে সরকারের ওপর চাপটা তৈরি হতে পারে। আলাপ-আলোচনা করে তারা কখন কীভাবে পদত্যাগ করবেন, নির্বাচনকালীন অন্তর্বতীকালীন সরকার কীভাবে হতে পারে, নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকার মধ্য দিয়ে একটা রাস্তা তৈরি হতে পারে।’
বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা জোটের ডাকা ২৪ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায়। ওই সময় থেকে শুরু হবে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘শেখ হাসিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা বের করলেন… এতোই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিজের দলের প্রার্থীদের বললেন, ডামি প্রার্থী দাঁড়াও, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হবে। আর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা হবে বহিষ্কার সবাই হবে না। স্বতন্ত্র করে দেওয়ার ব্যাপারে নাকি তারা সাহায্য করবেন। এই হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতার খবর। প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুঁজে পাওয়া গেছে… আওয়ামী লীগ ডামি প্রার্থী বানিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তামাশারও শেষ আছে। বাংলাদেশে আজকে মনে হয় তামাশার কোনো শেষ নাই। তামাশা, তার চাইতে আরও বড় তামাশা আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দলটি বাংলাদেশে তামাশার দিক থেকে সবচেয়ে জিজ্ঞাসী, সবচাইতে বলিয়ান হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণকে বলতে চাই, ১৬শ’ কোটি টাকা খরচ করে বাংলাদেশের বর্তমান-ভবিষ্যতকে হুমকির মধ্যে ফেলে এই যে তামাশা করা হচ্ছে এটা কেবল প্রত্যাখ্যান নয়, এই রকম নির্বাচনে কোনো ভোট না দিয়ে একে প্রতিরোধ করে বাংলাদেশকে আজকে বাঁচাতে হবে।’
জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, হাবিবুর রহমান রিজু, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, সিরাজ মিয়া, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ইমরান ইমন প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া গণফোরাম-পিপলস পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, জাতীয়তাবাদী সমমনা দল, ১২ দলীয় জোট, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ প্রমুখ রাজনৈতিক জোট-দলের নেতা-কর্মীরা বিজয় নগর, তোপখানা রোড় ও নয়া পল্টনের সড়কে মিছিল করে।
