কেন্দ্রে ভোটার না আসার শঙ্কায় বগুড়ার প্রার্থীরা

0
90

চলমান বিরোধী দলের ডাকা অবরোধ-হরতালের প্রেক্ষিতে পুলিশের মামলায় ‘অজ্ঞাত আসামি’ নিয়ে বগুড়ার স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিচলিত। এতে বগুড়ার প্রায় সব পাড়া-মহল্লার সাধারণ মানুষ পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেও একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী ও দলীয় প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দের অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন। তারা জেলা প্রশাসককে হয়রানি বন্ধের অনুরোধ করেন।

গতকাল সকালে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালের ৫৪ জন প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। সেখানে মুক্ত আলোচনায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আচরণবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। প্রার্থীরা কী কী করতে পারবেন, কী কী করতে পারবেন না এসব নিয়ে আইনের আলোকে বক্তব্য রাখেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। এ সময় বগুড়া-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ বগুড়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, রাজনৈতিক মামলায় অজ্ঞাত আসামি শব্দটার কারণে ভয়ে অনেকেই বাড়িছাড়া। অনেকেই অভিযোগ করছেন তারা ভোটের দিন কেন্দ্রে যেতে পারবে না কিছু প্রার্থীর হুমকির কারণে। আপনি ভোটের এই সময়টাতে অজ্ঞাত আসামিদের নামে সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করা বন্ধ করবেন কিনা? সেই সঙ্গে তিনি জানতে চান ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত করার জন্য প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা? জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু আমাদের উপর আপনার আস্থা নেই সেহেতু ভোটার উপস্থিত করার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। আমাদের উপর আস্থাই নেই নির্বাচনে আসছেন কেন? এরপর জেলা প্রশাসক বলেন, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে যদি কেউ বাধা দেয় তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করবো।

এরপর বগুড়া-২ শিবগঞ্জ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিউটি বেগম বলেন, পুলিশ অজ্ঞত আসামিদের ধরার নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে।

অনেক মানুষ ঘরছাড়া। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভোটের দিন ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম হবে। তিনিও অজ্ঞাত আসামি না ধরার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পুলিশকে অনুরোধ করেন। বগুড়া-১ আসনের বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা ভোট ফেয়ার করার পর ফলাফলটা ফেয়ার করার জন্য কেন্দ্রেই ফলাফল ঘোষণার ব্যবস্থা করবেন। ভোট যেন কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে গণনা করতে না হয়।

৭ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এটিএম আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকার একজন দোকানদারকে অজ্ঞাত আসামির নামে পুলিশ তুলে নেয়। ওই দোকানদার একেবারেই নিরপরাধ। আমি এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিলে তাকে ছেড়ে দিতে বললেও পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়নি। চালানের মাধ্যমে জেলে প্রেরণ করেছেন। এভাবে অন্যায়ভাবে সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করলে ভোটের দিন বিরূপ প্রভাব পড়বে। আমরা অজ্ঞাত আসামি ধরার বিষয়ে সমাধান চাই। সোনাতলা-সারিয়াকান্দি আসনের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াসির রহমতুল্লাহ ইন্তাজ বলেন, আমার আসনের এখানো বেশকিছু শক্তিশালী প্রার্থীর রঙ্গিন ব্যানার দিব্যি ঝুলছে। এগুলো দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা নেয়া হোক। সেই সঙ্গে তিনি নির্বাচন চলাকালে নির্বাচন কর্মকর্তাদের কেন্দ্র নির্বাচনের বিষয়ে বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি মোতাহার হোসেন প্রার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলেন, পুলিশ কেবল অপরাধীদেরই গ্রেপ্তার করছে। কেউ যদি অপরাধ না করে থাকে তাহলে সে বাড়িতে কেন থাকতে পারবে না।  অজ্ঞাত আসামিদের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, অপরাধ করে কেউ বাড়িতে ঘুমাবে সেটা হতে পারে না। যদি কেউ নির্বাচন বিঘ্ন ঘটাতে কোনো ধরনের অপতৎপরতা চালায় তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষে গ্রহণ করবো। সেই সঙ্গে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা যদি কোনো প্রার্থীর হয়ে কাজ করে তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন পুলিশ যাতে কোনো নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি না করে সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই পুলিশ সুপারকে বলা আছে।

উল্লেখ্য, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া বগুড়ার ৭টি আসনে ৫৪ জন প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গতকালা সকাল ১০টা থেকে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শুরু হয় প্রতীক বরাদ্দ কার্যক্রম। শুরুতেই মতবিনিময় সভায় প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়। মতবিনিময় সভা শেষে বগুড়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম প্রতীক বরাদ্দের পত্র প্রার্থীদের হাতে তুলে দেন। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী, জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্র সহ একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ নেন। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বগুড়ার ৭টি আসনের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনে প্রতীক পেয়েছেন ১০ জন, বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে ৭ জন, বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে ১১ জন, বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে ৫ জন, বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে ৫ জন, বগুড়া-৬ (সদর) আসনে ৫ জন ও বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে ১১ জনসহ এই ৭টি আসনে মোট ৫৪ জন প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ছিল রোববার। গতকাল প্রতীক বরাদ্দ। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে আনুষ্ঠানিক প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here