কেউ এসেছেন কোলের শিশু নিয়ে, কেউ এসেছেন অবুঝ সন্তান নিয়ে, আবার কেউ নাতি-নাতনি নিয়ে। বৃদ্ধ বাবা, মা, স্ত্রী, ভাই-বোনরাও এসেছেন। তাদের কারও চোখে পানি, কারও হাতে প্ল্যাকার্ড, কারও হাতে ব্যানার। তারা সবাই বিরোধী রাজনৈতিক দলের ‘নির্যাতিত’ নেতাকর্মীদের স্বজন। বিএনপি’র এসব নেতাদের মধ্যে কেউ শিকার হয়েছেন গুম-খুনের, কেউ বা আছেন কারাগারে। গতকাল প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে স্বজনদের মুক্তি দাবি করেছেন তারা।
রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে দাদা-দাদির হাত ধরে আসে দুই অবুঝ শিশু বর্ষা ও নূরী। মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কারাবন্দি মায়ের জন্য মুক্তি দাবি করে এই দুই শিশুকন্যা। শিশু বর্ষা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলে, আমার মাকে ছেড়ে দেন। আমার পরীক্ষা। আমি মাকে ছাড়া স্কুলে যেতে পারি না।
এ সময় পাশে থাকা বৃদ্ধ দাদি বলেন, আমার ছেলে আবদুল হামিদকে না পেয়ে পুত্রবধূ পুতুলকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। তার নামে তো কোনো মামলা নেই।
আমার পুরো পরিবার বিএনপি করে- এটাই অপরাধ। চারদিন ধরে আমার বউমার সঙ্গে দেখাও করতে পারছি না। দুটি দুধের শিশুকে আমি সামলাতে পারি না। সারারাত ঘুমাতে পারি না।
বোন ও দাদি যখন কথা বলছিলেন তখন অঝোর ধারায় কাঁদছিল ছোট্ট শিশু নূরী। তার কান্নার জবাব দেয়ার ভাষা ছিল না কারও।
তিন ছেলের গ্রেপ্তারের বর্ণনা দিয়ে পিতা আব্দুল হাই বলেন, আমার তিন সন্তানকে কারান্তরীণ করা হয়েছে। এক ছেলেকে ১০ বছর সাজা দেয়া হয়েছে। বড় ছেলেকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে পুত্রবধূকে তিনদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে পুলিশ। অথচ, আমার ছেলের বউ রাজনীতিতে জড়িত নন। তিনি বলেন, বিএনপি করা কি আমাদের অপরাধ? আমরা শুধু সুষ্ঠু ভোটের অধিকার চেয়েছি।
দুধের শিশু কোলে নিয়ে আসা নাজমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী তানভীর আহমেদ কোনো রাজনীতি করেন না। গার্মেন্টসে চাকরি করেন। ১৭ই অক্টোবর রাতে সাড়ে ৯টায় গার্মেন্টস ছুটি হওয়ার পর বাসায় এসে ভাত খান। অসুস্থ শিশুকন্যার জন্য ওষুধ আনতে বাইরে যায়। ওই সময় বাসার গেটের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। আমার স্বামী জানেন না কোন কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম- নাশকতার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বামীর ইনকামে আমার সংসার চলে। আমার ছোট ছোট দুটি বাচ্চা। শ্বশুর-শাশুড়ি অসুস্থ। এক মাস ১২ দিন ধরে কারাগারে। এখন বাসাভাড়া দেবো কীভাবে, কীভাবে সংসার চালাবো বুঝে উঠতে পারছি না। জামিনের আবেদন করেছি- কিন্তু জামিন দিচ্ছে না।
কারাবন্দি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবুল কালামের ছয় বছরের ছেলে সিয়ামও মায়ের সঙ্গে এসেছে এই স্বজনদের প্রতিবাদ সমাবেশে। শিশু সিয়াম কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমার বাবাকে ছেড়ে দেন, প্লিজ আমার বাবাকে ছেড়ে দেন।