দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘একতরফা, ডামি ও বানরের পিঠা ভাগাভাগির নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে অলিখিতভাবে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। এর মাধ্যমে সরকার নিজেই প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র মৃত। আজকে সেই কারণে আমরা রাজপথে নেমেছি।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর কদমতলীর পূর্ব জুরাইনের ইসলামাবাদ রোডে কারাগারে নিহত বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীর বাসায় গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় ইদ্রিস আলীর পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নেন মঈন খান।
আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকে বাংলাদেশের পরিবেশ-পরিস্থিতি এ রকম- এখানে কেউ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে সেটা হয়ে যায় অপরাধ। মানুষের যে মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার- আজকে বাংলাদেশের মানুষ সব কিছু হারিয়েছে। আমরা তার প্রতিবাদে রাজপথে দাঁড়িয়েছি। আমরা রাজপথে কালো পতাকা দেখাতে চেয়েছি। আমরা রাজপথে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চেয়েছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, মানুষের ন্যূনতম যে অধিকার সেই অধিকারও সরকার হরণ করে নিয়েছে।
কারাগারে নিহত ইদ্রিস আলী মোল্লা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি কদমতলী থানা বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এর চেয়ে বড় গর্ব তার জন্য আর কী হতে পারে। তার কী অপরাধ ছিল? তিনি গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার চেয়েছিলেন। অথচ এমন একজন তৃণমূলের নেতাও এই সরকারের রোষাণল থেকে রেহাই পাননি। তার প্রতি সরকারের কি প্রতিহিংসা থাকতে পারে? যে কারণে তাকে ঘর থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। অসুস্থ হলে সে কোনো চিকিৎসা পায় না এবং পাঁচ দিন পর তার মৃতদেহ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এই হচ্ছে দেশের অবস্থা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূলের রাজনীতি করেন। তৃণমূলের প্রতিটি নেতাকর্মী সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল আছেন। আমাদের নেতাকর্মীরা কে কোথায় কী অবস্থায় আছেন, কোনো দুঃখ-কষ্টে আছে, সেটা আমরা কোনোভাবে লাঘব করতে পারি কি না- সে বিষয়ে তিনি সব সময় সচেতন। সে কারণে আমরা এখানে এসেছি। আমরা একটি কথা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করছি- যে গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, এ দেশের লাখ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধা জীবন দিয়েছিলেন।
মঈন খান বলেন, বাংলাদেশ কেন সৃষ্টি হয়েছিল? আমরা বলেছিলাম, পাকিস্তানের অবকাঠামোর ভেতরে থেকে গণতন্ত্র সম্ভব নয়। সেজন্য আমরা একটা স্বাধীন দেশ চাই, যার নাম হবে বাংলাদেশ। সেই স্বাধীন দেশে প্রতিটি মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকবে। তাদের কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার থাকবে। অথচ আজকে বাংলাদেশে একদলীয় সরকার কায়েম হয়েছে। এখানে মানুষের অধিকার হরণ করে নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে ১৯৭৫ সালে জাতীয় সংসদের ভেতরে মাত্র ১১ মিনিটের ব্যবধানে একটি আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে নিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। আর আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন এই সরকার অলিখিতভাবে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। তার প্রমাণ হচ্ছে এবারের ডামি, একতরফা, বানরের পিঠা ভাগাভাগির নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার নিজেই প্রমাণ করে দিয়েছে, বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র মৃত। আজকে সেই কারণে আমরা রাজপথে নেমেছি।
বিএনপির এই নীতি-নির্ধারক বলেন, আমরা রাজপথে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনব। আজকে নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস নতুন করে জানতে হবে। সেই স্বাধীনতা আন্দোলনের দ্বিতীয় অভিষ্ট ছিল এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। কিন্তু এই সরকার মানুষকে সেই অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারেনি। উল্টো তারা পাকিস্তানের ২২টি পরিবারের পরিবর্তে বাংলাদেশে ২২০টি ধনী পরিবার সৃষ্টি করেছে, যারা বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়েছে। তারা এ দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করেছে এবং তারা এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
এরপর শ্যামপুরে সদ্য কারামুক্ত বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক অসুস্থ সালাউদ্দিন আহমেদের বাসায় যান ড. মঈন খান। তিনি সালাউদ্দিন আহমেদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। এ সময় সদ্য কারামুক্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন উপস্থিত ছিলেন।