‘একতরফা’ সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বান ইউট্যাবের

0
84

আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘একতরফা’ ও ‘প্রহসনমূলক’ আখ্যা দিয়ে এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং ভোট প্রদানে বিরত থাকার জন্য ভোটার এবং সচেতন নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।

নির্বাচন ইস্যুতে ৯১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের দেওয়া বিবৃতির প্রতিবাদে ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান বুধবার (২০ ডিসেম্বর ২০২৩) এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান।

তারা বলেন, গণতন্ত্র, সাম্য ও ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু স্বাধীনতাত্তোর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বহু কষ্টে অর্জিত গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে দেশে একদলীয় বাকশাল শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই দলটি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশ-জাতি সংকটে পড়েছে। ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দুর্ভিক্ষ জাতি ভুলে যায়নি। আজও দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। জনগণ ভয়ে মুখ খুলে প্রতিবাদও করতে পারছে না। কারণ এই আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর দেশে দুর্বিনীত দুঃশাসন কায়েম করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে বিভিন্ন কালাকানুন অপপ্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের গলাটিপে ধরা হয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে।

তারা আরও বলেন, সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর সীমাহীন দমনপীড়ন চালাচ্ছে। ক্রসফায়ার ও জোরপূর্বক গুমের সংস্কৃতি চালুর মাধ্যমে অহরহ মানবাবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে সরকার ও তাদের অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ ও হামলা চালিয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মী আহত এবং কয়েকজন নিহত হয়েছেন। যা খুবই দুঃখজনক। শুধু তাই নয়, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে অদ্যাবধি প্রায় ২৩ হাজার নেতাকর্মীকে বিনা কারণে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ অসংখ্য কেন্দ্রীয় ও শীর্ষ নেতা রয়েছেন। এরপরও দেশে পরিকল্পিতভাবে নাশকতা ঘটাচ্ছে সরকার ও তাদের বিভিন্ন সংস্থার লোকেরা। তা না হলে অপরাধীদের ধরা হচ্ছে না কেনো? গত মঙ্গলবার ভোরে তেজগাঁওয়ে আবার ট্রেনে আগুন লাগিয়ে চারজন ব্যক্তির প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিরোধীদলের কোনো নেতাকর্মী রাস্তায় নামতেই পারছে না। অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি। তারপরও এসব জ্বালাও-পোড়াও এবং অন্যায় অপকর্মের দোষ চাপানো হচ্ছে বিরোধীদলের ওপর।

নেতারা বলেন, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে পুলিশ বাহিনীর একাংশের পরিকল্পিত নারকীয় ও বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে গত ৩১ অক্টোবর ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিবাদ’ শিরোনামে একটি প্রেস ব্রিফিং নোটস প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে সুস্পষ্টভাবে ২৮ অক্টোবরে বিরোধীদলের কর্মী, পথচারী ও পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর ঘটনার উল্লেখ আছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবন আক্রমণের ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী, হেলমেটধারীরা সরকারি দলের সমর্থক বলেই ধারণা।

ইউট্যাবের নেতৃদ্বয় বলেন, এতকিছুর পরও এভাবে বিরোধীদলকে ছাড়াই নতুন ‘কিংস পার্টি’ ও ‘ভুইফোঁড় পার্টি’ তৈরি করে ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের আয়োজন সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। অথচ দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ ৬৪টি রাজনৈতিক দল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ৩৯টি রাজনৈতিক দল সরাসরি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

তারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে জনগণের ভোট ডাকাতির মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ব্যবহার করছে। তারা বারবার গণতন্ত্র ও সংবিধানের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এর আগেও ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোটারবিহনী একতরফা ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করেছে। আবারও একই কথা বলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে যাচ্ছে। কিন্তু যে দেশে গণতন্ত্র নেই, আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে সংবিধানকে অসংখ্যবার সংশোধন করেছে। সেখানে গণতন্ত্র ও সংবিধানের দোহাই জাতির সঙ্গে স্রেফ প্রতারণা ও বেইমানি। এক্ষেত্রে নির্বাচন ইস্যুতে দেশের অগণিত গণতন্ত্র ও মুক্তিকামী মানুষের পক্ষ থেকে ‘৯১ বিশিষ্ট নাগরিক’র তথাকথিত বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করছি।

সুতরাং আমরা শিক্ষক সমাজ মনে করি, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া। আজকে দেশের মানুষের এই ক্রান্তিকালে দেশের সম্মানিত ভোটার ও সচেতন এবং বিবেকবান নাগরকিদের কাছে আহ্বান আসুন আমরা সবাই মিলে অনুষ্ঠেয় প্রহসনের নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকি। তা না হলে জাতি ও ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। আমরা সবাই মিলে সজাগ হলেই গণতন্ত্র জয়ী হবে। দেশের জনগণ স্বস্তি পাবে। উঁচু হয়ে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here