এই আন্দোলন জাতিকে রক্ষার: ফখরুল ইসলাম আলমগীর

0
30

সরকার হটানোর আন্দোলনে ‘ঢাকায় দুর্বোধ্য দুর্গ’ গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বিগত আন্দোলনে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এক ইফতার ও দোয়া মাহফিলে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ইফতারের আগে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার ৬৪ জন নেতাকর্মীর পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

মির্জা ফখরুল বলেন, সারাদেশের মানুষ কত কষ্টে আছে। কয়েকদিন আগে আমি আমার জেলা ঠাকুগাঁওয়ে গিয়েছিলাম। আমি দেখেছি তারা ভয়াবহভাবে দূঃখ-কষ্টে জীবনযাপন করছে। অথচ তাদের মুখে কিন্তু কোনো হতাশার ছাপ আমি দেখি নাই। এতো অত্যাচার নির্যাতনের পরেও তারা সুন্দর আছে, সঠিক আছে, দৃঢ়চেতা আছে। আমাদেরকে তারা এই কথা বলেছে যে, আপনারা সঠিক নির্দেশনা দেন, সঠিক কর্মসূচি দেন তাহলে আমরা আবার সামনের দিকে এগিয়ে আগেকার মতো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারব।

তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের উদ্দেশ্যে আমি দুই-একটি কথা বলতে চাই, ঢাকা মহানগর হচ্ছে কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের সমস্ত আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যে ঢাকায়।

এখানে সরকারের ভয়াবহ সেই দানবদেরকে পরাজিত করা। সেই কারণে ঢাকা মহানগরের নেতৃবৃন্দদের দায়িত্ব অনেক বেশি। আমি অনুরোধ করব মহানগরের নেতৃবৃন্দকে ঢাকাকে সেইভাবে গড়ে তোলেন যেন ঢাকা দুর্বোধ্য দুর্গে পরিণত হয়। এই দুর্গ যেন কেউ ভাঙতে না পারে সেইভাবে আমাদেরকে এখানে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। সবচেয়ে মনোনিবেশ করতে হবে সংগঠনের প্রতি।

ফখরুল বলেন, এই আন্দোলন বিএনপির আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন জাতিকে রক্ষা করবার আন্দোলন। আমাদের চলমান আন্দোলন গণতন্ত্রের জন্য, আমাদের চলমান আন্দোলন ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনবার জন্য। আমাদের চলমান আন্দোলন আমাদের প্রিয় রাষ্ট্রকে সকল ধরনের আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত করে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন বাংলাদেশে পরিণত করবার জন্যে।

তিনি বলেন, আমরা তখনই জাতিকে রক্ষা করতে পারব যখন এই জনসমর্থনহীন একেবারে ম্যান্ডেটবিহীন যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে।  এই দখলদারি সরকারকে সরিয়ে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। আমরা একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছিলাম একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য যা আজকে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, কথা বলার অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, সংবিধান তছনছ করেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার যা আগে কখনো দেখিনি আমাদের সন্তানদেরকে, ভাইদেরকে গুম করে দিয়েছে। ১২/১৩ বছর হয়ে গেছে এখনো আমরা তাদের খবর জানি না। আমাদের ছেলেদের পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে, বিনা বিচারে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, বিএনপির ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। ২৮শে অক্টোবরের সমাবেশের পর দুইদিনের মধ্যে ৩৭ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে, বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এককথায় এই রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় নিয়ে গেছে।

ফখরুল বলেন,  প্রত্যেকটি বড় বিজয়ের জন্য, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আমাদের নবী রসুল্লাহ (সা.) একদিনে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে সক্ষম হননি। দীর্ঘকাল লেগেছে তার এই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে। একদিনের ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি সব জায়গায়। আজকে ফেরাউন-নমরুদ-হিটলারের মতো কর্তৃত্ববাদী ধ্বংসকারী সরকারগুলো যখন এসেছে তখন তারা চেষ্টা করেছে সারা জীবন তাদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা দেখেছি, আজকে আওয়ামী লীগ যা চেষ্টা করছে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবার জন্য। অতীতে তাদের নেতা ’৭৫ সালেও চেষ্টা করেছিলেন বাকশাল সৃষ্টি করে জনগণকে পুরোপুরিভাবে একটা বন্দি অবস্থায় নিয়ে আসার। আজকে আবার তারা (আওয়ামী লীগ) নতুন কায়দায় শুরু করেছে একদলীয় সরকার বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও দুই মহানগরের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হকের যৌথ সঞ্চালনায় ইফতারপূর্ব আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষে এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা, চৌধুরী আলমের ছেলে আবু সাদাত শাওন চৌধুরী, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি, পারভেজ হোসেনের মেয়ে হৃদি, আনোয়ার হোসেন মাহবুবের মেয়ে রাইসা প্রমুখ তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, জয়নাল আবেদীন, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here