টম ল্যাথাম, ডেভন কনওয়ে, হেনরি নিকোলস, ড্যারিয়েল মিচেল, টম ব্লান্ডেল, গ্লেন ফিলিপস একে একে ফিরে গেলেন সাজঘরে। কিন্তু একজন দেয়াল হয়ে লড়াই চালিয়ে গেলেন, তিনি কেন উইলিয়ামসন। নিউজিল্যান্ডের এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দলের ৩৬ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর ক্রিজে এসেছিলেন। গতকাল সিলেট টেস্টে সারাদিনটা হয়ে উঠেছিল যেন উইলিয়ামসন বনাম বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত আউট হলেও তিনি সেঞ্চুরি তুলে নেন। খেলেন ১০৪ রানের ইনিংস। যদিও দুইবার জীবন পেয়েছেন টাইগার ফিল্ডারদের ব্যর্থতায়। তা না হলে গোটা দিনটা একবাক্যে বলা যেতে পারে টাইগার বোলারদেরই। অবশ্য ক্যাচ মিস, রিভিউ না নেয়ার ভুল সিদ্ধান্ত না হলে হয়তো আরও আগেই ইনিংস গুটিয়ে যেতে পারতো নিউজিল্যান্ডের। টাইগারদের ভুলের সুযোগ নিয়ে দিন শেষে সফরকারীদের স্কোর বোর্ডে ২৬৬ রান ৮ উইকেট হারিয়ে।
তৃতীয় দিন সকালে মাঠে নামবেন ৭ রানে অপরাজিত থাকা জেমিসন ও তাকে সঙ্গ দিবেন এক রান করা কেউই অধিনায়ক টিম সাউদি। এখনো তারা পিছিয়ে আছেন ৪৪ রানে। দু’জনকে ফেরাতে পারলে লিড নেয়া সম্ভব হবে শান্তদের। বাংলাদেশের সফল বোলার স্পিনার তাইজুল ইসলাম, তিনি ৮৯ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম ইসলাম ও মুমিনুল হক।
প্রথম দিনে ৩১০ রানে ৯ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। গতকাল স্কোর বোর্ডে কোনো রান যোগ করতে পারেনি আগের দিন প্রতিরোধ গড়া দুই ব্যাটার। দিনের প্রথম বলেই ১৩ রান করা শরিফুল ইসলাম আউট হন। ৭ রানে অপরাজিত থাকেন তাইজুল। নিউজিল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংস শুরু করে সতর্কতার সঙ্গে। দুই ওপেনার লাথাম ও কনওয়ে ওপেনিং জুটিতে যোগ করেন ৩৬ রান। ম্যাচের ১৩তম ওভারে কিউই শিবিরে আঘাত হানেন তাইজুল ইসলাম। তিন ওভার না যেতেই দ্বিতীয় আঘাত হানেন আরেক স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪৪ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে সফরকারীরা। এ অবস্থায় তৃতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন উইলিয়ামসন ও নিকোলস। প্রতিরোধ গড়ে ৫৪ রান যোগ করেন তারা। তবে পেসার শরিফুলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ১৯ রানে বিদায় নেন নিকোলস। তবে একপ্রান্ত যে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন উইলিয়ামসন। মিচেলকে সঙ্গে নিয়ে ফের প্রতিরোধ গড়েন। অবশ্য এই জুটি ৩৪তম ওভারেই বিচ্ছিন্ন হতে পারতো।
কিন্তু বাংলাদেশের ভুলে সেটি আর হয়নি। শরিফুলের বলে টাইমিং মিস হলে বল ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে জমা পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশের আবেদন সাড়া দেননি আম্পায়ার। তারপরও রিভিউ নেয়নি টাইগাররা। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, মিচেল আউট ছিলেন। ৪ রানে জীবন পেয়ে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪১ রান করা মিচেল শেষ পর্যন্ত তাইজুলের বলে স্টাম্প আউট হন। চতুর্থ উইকেটে দু’জনের জুটিতে আসে ৬৬ রান। এরপর উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলকে ৬ রানে থামিয়ে দেন স্পিনার নাঈম। ১৭৫ রানে ৫ উইকেট পতনের চিন্তায় পড়ে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু এবার ফিলিপসকে নিয়ে বড় জুটির চেষ্টায় সফল হন উইলিয়ামসন। তুলে নেন সেঞ্চুরিও। এর আগে ব্যক্তিগত ৬৪ রানে নাঈমের বলে মিড উইকেটে ক্যাচ তুললেও তাইজুল তা লুফে নিতে ব্যর্থ হন। ৪ রান যোগ করতেই আবারো ক্যাচ তুলেছিলেন তিনি কিন্তু এবার পেসার শরিফুল তার ক্যাচ ছাড়েন। জীবন পেয়ে ফিলিপসকে নিয়ে ৭৮ রান যোগ করেন তিনি। প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসেই সাফল্য তুলে নেন পার্টটাইম স্পিনার মুমিনুল হক। স্লিপে শান্তর দারুণ ক্যাচে ফিলিপসকে ৪২ রানে থামিয়ে দলকে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করেন। তার বিদায়ের পর টেস্টে ২৯তম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন উইলিয়ামসন। ১১টি চারে ১৮৯ বলে টানা চার টেস্টে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। অবশ্য এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তাকে জীবন দেয়া তাইজুলই দেখান সাজঘরের পথ। তার বিদায়ের পর ইশ সোধিকে খালি হাতে বিদায় দেন তাইজুল। এরপর দিনের বাকি সময় আর কোনো উইকেট পড়তে দেননি কাইল জেমিন ও সাউদি।