শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইমলাম, মাকে দিয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান। ইসলামের দৃষ্টিতে বাবার চেয়ে মায়ের মর্যাদা তিনগুণ বেশি। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবি করিম (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে জানতে চান, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে আমার কাছে সর্বোত্তম সেবা লাভের অধিকার কার?’ নবি করিম (সা.) বলেন, ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি আবার জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি আবার জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি আবারও জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার পিতার।’ (বোখারি ও মুসলিম)। নবজাতক হজরত ঈসা (আ.)-এর মুখে রাব্বুল আলামিন ভাষা দিয়েছিলেন, হজরত ঈসা (আ.) বলেন, ‘আর আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আমি যেন আমার মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করি (অনুগত ও বাধ্য থাকি); আমাকে করা হয়নি উদ্ধত, অবাধ্য ও দুর্ভাগা হতভাগ্য। (সূরা মারিয়াম : ৩০-৩২)। হাদিসে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। বনি ইসরাইলের নবি হজরত মূসা (আ.)-এর প্রতিও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আল্লাহ বলেন-‘আর আমি বনি ইসরাইল থেকে এ অঙ্গীকার নিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত করবে না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।’ (সূরা-২ বাকারাহ, আয়াত-৮৩)।
সুতরাং মায়ের মূল্য অনেক বেশি। পুরো পৃথিবী বিক্রি করে দিলেও মায়ের এক ফোঁটা দুধের দামও হবে না। মা তার পুরো জীবনটা অকাতরে বিলিয়ে দেন শুধু তার সন্তানের জন্য। ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ তারপর অসহ্য প্রসব যন্ত্রণাকে স্বাগত জানিয়ে সন্তানকে দুনিয়াতে আলো দেখান! আড়াই বছর বুকের দুধ পান করান। তারপর সব দুঃখ-কষ্টকে আড়াল করে সন্তানকে লালন-পালন করে বড় করেন। ইসলামে মাকে অনেক বেশি মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবে না এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলো না এবং তাদেরকে ভর্ৎসনা করো না। তাদের সঙ্গে কথা বলো সম্মানসূচক নম্রভাবে।’ (সূরা বনি ইসরাইল-২৩)। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয়; এতে কোনো সন্দেহ নেই-এক. মা-বাবার দোয়া তার সন্তানের জন্য; দুই. মুসাফিরের দোয়া ও তিন. অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া অত্যাচারীর বিরুদ্ধে।’ (সুনানে আবু দাউদ-১৫৩৮)। ইমাম বোখারি (রা.)-এর বাল্যকালেই তার পিতা মারা যান। তিনি তার মায়ের কোলেই লালন-পালন হতে লাগলেন। বাল্যকালে একবার অসুস্থ হয়ে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এমতাবস্থায় তার মা তার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। কারণ তিনি সন্তানকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতেন।
সন্তানের অসুস্থতা মায়ের জন্য কতটা বেদনাদায়ক তা কেবল একজন মা-ই অনুভব করতে পারেন। ছেলের অসুস্থতার জন্য তিনি রবের কাছে দোয়া করতে থাকেন। সন্তানের জন্য মায়ের দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। একরাতে তিনি আল্লাহতায়ালার কাছে অনেক দোয়া করলেন, এর কিছু দিন পর তিনি স্বপ্নে হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে দেখলেন। তিনি বললেন, তোমার সন্তানের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান ইমাম বোখারি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন! সুবহানাল্লাহ। মায়ের দোয়াটা কত বেশি কার্যকর! পৃথিবীর সব মানুষ ভুলে যায়, স্বার্থপরতা করে, ছেড়ে চলে যায়; কিন্তু মা এ জায়গায় ভিন্ন। কোনো দিন সন্তানকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তাও করেন না; সন্তানকে আগলে রেখে কোলেপিঠে করে মানুষ করতে চেষ্টা করেন। মা-বিহীন জীবন মরুভূমির মতো, জলহীন সমুদ্রের মতো। মায়ের কোলে রয়েছে পৃথিবীর সব সুখ। মায়ের কোলটা যে কত বিশাল একটি আশ্রয়স্থল তা একজন যোগ্য সন্তান ছাড়া আর কেউ বুঝবে না বা বোঝানো সম্ভব হবে না। মাকে ছাড়া যখন থাকতে হয় তখন এক মুহূর্তও হয়ে ওঠে শ্বাসরুদ্ধকর। মনে হয় দম যেন বন্ধ হয়ে আসে। মা তো অক্সিজেনস্বরূপ। মা না থাকা মানে শুধু মা না থাকাই নয়; বরং মা না থাকার সঙ্গে আরও হাজারো সমস্যা যুক্ত হয়ে যায়। আর তখন মানবজীবন হয়ে ওঠে সবচেয়ে দুর্বিষহ!
যার মা আছে, সে কখনোই গরিব নয়। মা থাকলে না খেয়েও মনে প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া যায় আর মা-বিহীন পৃথিবী এক ধরনের জাহান্নামের মতো অবস্থা। আল্লাহতায়ালা পৃথিবীর সব জীবিত মাকে সুস্থ রাখুন এবং যারা পরলোকে চলে গেছেন তাদের সবাইকে জান্নাতুল ফিরদাউসের উঁচু জায়গায় স্থান করে দিন। আল্লাহতায়ালা সূরা বনি ইসরাইলের ২৪ নং আয়াতে এরশাদ করেছেন- ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানী সাগীরা’ অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমার পিতা-মাতার প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া-মায়া, মমতাসহকারে আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছিলেন। মা তোমাকে অনেক ভালোবাসি। বিশ্বনবি মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, মহান আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সাওয়াব দান করেন। (বায়হাকি মিশকাত, পৃষ্ঠা-৪২১)।