দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা নেই, তবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি তার বন্ধুত্ব এখনো অমলিন। দীর্ঘ ২৭ বছর কারাবাসের পর ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুক্তি পান তিনি। মুক্তির সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ম্যান্ডেলা সাক্ষাৎ করেন আরেক মুক্তিকামী নেতা ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে।
সাক্ষাতে আরাফাতকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ম্যান্ডেলা। তিনি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির আন্দোলনকে সমর্থন করতেন। যদিও এটা নিয়ে নানা বিতর্ক– সমালোচনা ছিল। কিন্তু ম্যান্ডেলা কখনোই সেসবে কান দেননি। কারণ ইয়াসির আরাফাতের প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন বা পিএলও ম্যান্ডেলার দীর্ঘদিনের সংগ্রামে সমর্থন জুগিয়েছে। এজন্য ম্যান্ডেলা আরব ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসনের ঘোর বিরোধী ছিলেন।
এ বিষয়ে নেলসন ম্যান্ডেলার দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপপ্রধান ওবেদ বাপেলা বলেন, নিজ ভূখণ্ডে এখনো পুরোপুরি স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে না ফিলিস্তিনিরা। তাদের ভূমি এখনো আগ্রাসী শক্তির দখলে। দক্ষিণ আফ্রিকা একসময় অনেকটা একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি।
ইতিহাসবিদ ও লেখক ডেভিড সাকস বলেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন থাকার পরও নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি ১৯৯৪ সালের পর ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সফর করেছিলেন।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার খ্যাতিমান কবি ও লেখক লেবোগাং মাশাইলি বলেন, ফিলিস্তিনের প্রশ্নে তিনি নেলসন ম্যান্ডেলা কখনোই আপস করেননি। তাদেরও করা উচিত হবে না।
দাদা নেলসন ম্যান্ডেলার দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের একজন আইনপ্রণেতা মান্ডলা ম্যান্ডেলা। ৩ ডিসেম্বর থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে জোহানেসবার্গে তিন দিনের একটি সম্মেলন আয়োজন করেছেন তিনি। সম্মেলনে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে চলমান সংঘাতের সূচনা। হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। বন্দি করা হয় ২৪০ ইসরায়েলিসহ অন্যান্য দেশের নাগরিককে। এসব হিসাব ইসরায়েল সরকারের। ওই দিনই হামাসের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।
দেড় মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই হামলায় স্কুল, কলেজ, মসজিদ, গির্জা, হাসপাতাল- কিছুই বাদ যায়নি। হামলায় প্রাণ গেছে ১৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির। বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ১৯ লাখ এখন বাস্তুচ্যুত।
কঠিন এই সময়ে ফিলিস্তিনিদের পাশে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন এএনসির আইনপ্রণেতাদের সমর্থনে একটি প্রস্তাব পাস হয়। এর আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করে দেশটি। দক্ষিণ আফ্রিকা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিত রাখা হবে।