আহলান-সাহলান মাহে রমজান ভাগ্য রজনী ‘শবেকদর’ যে কারণে মহিমান্বিত

0
30

২৭ রমজানের রাত। বেজোড় রাত। শবেকদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যে কারণে এই রাতকে পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর হওয়াকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এর অর্থ অতি সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও এবাদত-বন্দেগির মধ্যদিয়ে গত রাতে দেশব্যাপী পবিত্র এ রাতটি পালন করা হয়েছে। পবিত্র আল-কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী, হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এ রাত। মহান আল্লাহতায়ালার পবিত্র এ উপহার সমগ্র মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বরকতময় ও পুণ্যময় এক রজনী। এ রাতেই মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র  কোরআন নাজিল করেছেন। তাই লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত অসীম।

সমগ্র মুসলিম জাহানেই পবিত্র লাইলাতুল কদর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি রাত। এ রাতকে কেন্দ্র করে ‘আল-কদর’ নামে একটি সুরাও অবতীর্ণ হয়। হাদিস অনুযায়ী, ২০ রমজানের পর যেকোনো বেজোড় রাতে কদর হতে পারে। তবে ২৬ রমজান দিবাগত রাতেই অধিকাংশ মুসলিম লাইলাতুল কদর পালন করে থাকেন।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এ সংখ্যা তত্ত্বের দ্বারা এটাই অনুমিত হয় যে, অধিকাংশ বস্তুই আল্লাহতায়ালা সাতের হিসাব মোতাবেক সৃষ্টি করেছেন। তাই শবেকদর যদি রমজানুল মোবারকের শেষ ১০ রাতের মধ্যে হয়, তাহলে বর্ণিত বিবরণ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, শবে কদর ২৭ তারিখের রাতেই হবে। পবিত্র কোরআন শরিফের সূরা কদরের আয়াত-সালামুন হিয়া-এর পরবর্তী ‘হিয়া’ শব্দটি সাতাশ অক্ষরের পরে এসেছে। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, শবেকদর রমজান মাসের ২৭ তারিখের রাতে হয়ে থাকে। (গুনিয়াতুত তালেবিন, পৃষ্ঠা-৩৭৮)।

লাইলাতুল কদরের মর্যাদা: লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতটি পাওয়ার জন্য শেষ দশকে আজীবন ইতেকাফ করেছেন। উম্মতের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে রমজানের প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। তারপর আমার প্রতি ওহি নাজিল করে জানানো হলো যে, তা শেষ ১০ দিনে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে  যেন ইতিকাফ করে। তারপর মানুষ (সাহাবায়ে কেরাম) তাঁর সঙ্গে ইতেকাফে শরিক হন।’ (মুসলিম শরিফ)।

কদর রাতের ফজিলত: মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হওয়ার কারণে অন্যসব মাসের চেয়ে রমজান মাস বেশি ফজিলত ও বরকতময় হয়েছে। আর রমজানের রাতগুলোর মধ্যে  কোরআন নাজিলের রাত লাইলাতুল কদর সবচেয়ে তাৎপর্যমণ্ডিত একটি রাত। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি একে নাজিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জানো কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাসের  চেয়েও উত্তম। (সুরা কদর, আয়াত: ১-৩)।

এ আয়াতের ব্যাখায় মুফাস্‌সিরকুল শিরোমণি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘এ রাতের ইবাদত অন্য হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম’। (তানবিরুল মিকবাস মিন তাফসিরে ইবনে আব্বাস, পৃষ্ঠা-৬৫৪)।

তাবেয়ি মুজাহিদ (রহ.) বলেন, এর ভাবার্থ হলো, ‘এ রাতের ইবাদত, তেলাওয়াত, দরুদ কিয়াম ও অন্যান্য আমল হাজার মাস ইবাদতের চেয়েও উত্তম।’ মুফাসসিররা এমনই ব্যাখ্যা করেছেন। আর এটিই সঠিক ব্যাখ্যা। (তাফসিরে ইবনে কাসির: ১৮ খণ্ড, পৃষ্ঠা-২২৩)। শবে কদরের ব্যাপারেও ইমাম আবু হানিফা থেকে একটি তাত্ত্বিক বিষয় বর্ণিত হয়েছে যে, সূরা কদরের মধ্যে আল্লাহতায়ালা এ রাতকে ‘লাইলাতুল কদর’ বলেছেন। যার মধ্যে হরফ সংখ্যা ৯টি এবং শব্দ দুটি, আল্লাহতায়ালা এই সুরায় মোট তিনবার উল্লেখ করেছেন। তাই মোট হরফের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ক্ষ্মক্ম৩=২৭। এর জন্য ২৭ তারিখের রাতেই লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শবেকদরের এই রাতকে উপলক্ষ করে সারাদেশের সব মসজিদে ওয়াজ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়ে থাকে। আসুন, আমরা সবাই কবরবাসী মা-বাবাসহ আত্মীয়স্বজনদের জন্য দোয়া করি আল্লাহতায়ালা যেন তাদেরকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করেন এবং যারা জীবিত তাদের হায়াতে যেন বরকত দান করেন। আমিন।

আতিকুর রহমান নগরী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here