আহলান-সাহলান মাহে রমজান বেজোড় রাতে শবেকদর!

0
43

২৭শে রমজান তথা ২৬ রোজার পর আগত রাতকেই আমরা শবে কদর বলে জেনে আসছি। ওইদিন ব্যাপকভাবে শবে কদর বলে পালন করছি। শবে কদর পালনীয় কোনো রাত নয়। এই রাত হলো হাজার রজনীর চেয়ে উত্তম রাত। এই রাতকে অনুসন্ধানের মাধ্যমে লাভ করতে হয়। শুধু সাতাশের রাতে সীমাবদ্ধ থেকে ইবাদত করা হবে ভুল বরং শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করা চাই।  উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান কর’।-বুখারি, হাদিস নং-২০১৭, মুসলিম, হাদিস নং-১১৬৯।  অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে, আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করো’।-বুখারি, হাদিস নং-২০২০।  শবে কদর বা লাইলাতুল কদর। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাত।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি কদর (মর্যাদাপূর্ণ) রজনীতে। মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল (আ.) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষার উদয় পর্যন্ত।’-কদর, আয়াত নং ১-৫। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে কদর তালাশ করতে বলেছেন। 

হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান করো।’-বুখারি, হাদিস নং-২০১৭, মুসলিম, হাদিস নং- ১১৬৯। আজকের দিনগত রাত শেষ দশকের বেজোড় রাত। তাই শবে কদর হওয়ার সম্ভবনা আছে। লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) মহানবী (সা.)’র এক হাদিস বর্ণনা করেন ‘তোমরা শবে কদরকে রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলো সন্ধান করো। এ হিসাব অনুযায়ী শবে কদর ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের রাতগুলোতে অনুসন্ধান করা উচিত। মুসলমানদের জীবনে শবে কদরের গুরুত্ব অপরিসীম। মানব জাতির হিদায়াত ও কল্যাণের জন্য নাযিলকৃত মহাগ্রন্থ আল-কোরআন এ রাতেই নাজিল হয়। সুরাতুল কদরে এ রাতের তিনটি বৈশিষ্টের কথা বলা হয়েছে। (১) এ রাতে  কোরআন নাজিল হয়েছে (২) এ রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং (৩) এ রাতে জিবরাইল (আ.) ফেরিশতা দলসহ শান্তির পয়গাম নিয়ে দুনিয়ায় অবতরণ করেন। আল-কোরআনের সুরা দুখানেও এ রাতের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। হজরত আবু জাফর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে তিনি আরও বলেন, হুজুর (সা.)’র নিকট আরজ করলাম, শবে কদর নবী যুগের সঙ্গে নির্দিষ্ট না পরেও হবে? উত্তরে মহানবী (সা.) এরশাদ করলেন, এটি কিয়ামাত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে।’ আমি আরজ করলাম, ‘এটি রমজানের কোন অংশ হয়ে থাকে? তিনি বললেন, শেষ ১০দিনে অনুসন্ধান করো। অতঃপর হুজুর (সা.) অন্য কথাবার্তায় নিমগ্ন হলে আবার সুযোগ পেয়ে আমি আরজ করলাম এটি বলে দিন যে, ১০ দিনের কোন অংশে হয়ে থাকে? এটি শুনে মহানবী (সা.) এত বেশি অসন্তুষ্ট হলেন যে, তিনি ইতিপূর্বে ও পরে আমার ওপর কখনো এরূপ রাগান্বিত হননি। এমতাবস্থায় বললেন, এরূপ উদ্দেশ্য হলে আল্লাহতায়ালা কি বলে দিতে পারতেন না? শেষ দশকের রাতগুলোতে এটি অনুসন্ধান করো এরপর আর কোনো কিছু এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করো না।

হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘রমজানের শেষ দশকে রাসুল (সা.) স্ত্রীদের থেকে পৃথক হয়ে যেতেন। নিজে সারা রাত ইবাদতে মশগুল থাকতেন এবং পরিবার-পরিজনকে ইবাদতের জন্য জাগ্রত করে দিতেন।’-বুখারি-মুসলিম। এ রাতে নামাজ, দান-খয়রাত,  কোরআন তিলাওয়াত ছাড়াও বিভিন্ন দোয়া ও তাসবিহ-তাহলিল পাঠক করা যায়। রমজান মাসের শেষ ১০ দিনকে গণিমত এবং আল্লাহ প্রদত্ত এক সুবর্ণ সুযোগ মনে করে নেয়া উচিত। এটুকুও সম্ভব না হলে শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতসমূহে অযথা সময় না কাটিয়ে ইবাদতে মশগুল থাকার চেষ্টা করা উচিত। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে তার বন্দেগির জন্য কবুল করুন। আমিন।

আতিকুর রহমান নগরী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here