আন্দোলন বেগবানে এবার সব শরিককে নিয়ে বৈঠক বিএনপির

0
200

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলন আরও বেগবান করার কর্মকৌশল নির্ধারণে যুগপতের শরিক সব দলকে নিয়ে একত্রে বৈঠক করেছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর তোপখানা মোড়ে শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

গত ৩০ ডিসেম্বর সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরুর পর এটিই ছিল আন্দোলনে সম্পৃক্ত সকল রাজনৈতিক দল ও জোটের ঐক্যবদ্ধ বৈঠক।

বৈঠক থেকে একতরফা তপশিল প্রত্যাখ্যান করে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকরি রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে চলমান একদফার আন্দোলনে সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশা ও সামাজিক সংগঠনকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

বৈঠকে নেতারা বলেন, ‘আমরা রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ দীর্ঘদিন ধরে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে আসছি। এজন্য আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও গ্রেপ্তার সকল রাজবন্দীর মুক্তি এবং বিদ্যমান অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কারের দাবিতে যুগপৎ ধারায় এক আন্দোলনে আছি। এই দাবিগুলো ইতিমধ্যে গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।’

তারা আরও বলেন, ‘গণদাবির এই আন্দোলনে আতংকগ্রস্ত হয়ে পরিকল্পিত সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা ঘটিয়ে সরকার ও সরকারি দল গত ২৮ অক্টোবর বিএনপিসহ বিরোধী দলসমূহের মহাসমাবেশ পন্ড করে দেয়। বিএনপিসহ বিরোধীদের উপর এই দায় চাপিয়ে গত এক মাস দমন-নিপীড়ন ও গ্রেপ্তারের পথে দেশব্যাপী তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সরকার ও সরকারি দলের এইসব নৃশংসতায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের জন্য আমরা গভীর শোক প্রকাশ করি। একইসঙ্গে নিহত, আহত ও কারাবন্দীদের পরিবারের প্রতি আমরা সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।’

নেতারা বলেন, ‘আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করছি, সরকারের পদত্যাগের গণদাবিকে উপেক্ষা করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি একতরফা নীলনকশার নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। সরকারের এই রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সরকারের সহযোগী হিসেবে নির্বাচন কমিশন আগামি ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে। পাতানো এই নির্বাচনের অংশ হিসেবে আজ ৩০ নভেম্বর কথিত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখও নির্ধারণ ছিল। জনগণের ভোটের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সমগ্র এই নির্বাচনের তপশিলকে আমরা প্রত্যাখান করছি। আমরা অনতিবিলম্বে ৭ জানুয়ারি ঘোষিত নির্বাচনী তপশিল বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকরি রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই।’

তারা বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে উল্লেখ করতে চাই যে, সরকার যদি জেদ, অহমিকা নিয়ে জবরদস্তি করে নির্বাচনের নামে আরেকটি তামাশা মঞ্চস্ত করতে চায়, তাহলে সরকারের এই অশুভ তৎপরতা প্রতিরোধ করা ছাড়া দেশবাসীর সামনে অন্য কোনো পথ থাকবে না। আমরা সরকার ও সরকারি দলের সকল ধরনের উস্কানি, সহিংসতা ও পরিকল্পিত নাশকতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে চলমান গণআন্দোলন-গণসংগ্রামকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই। এই আন্দোলনে সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশা ও সামাজিক সংগঠনকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানাই।’

জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাড. হাসনাত কাইয়ূম, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণদলের চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, আরেক অংশের সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, এনডিএমের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মমিনুল আমিন, জমিয়তের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদেকী, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: নেয়ামুল বশির, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের মহাসচিব হারুন আল রশিদ খান, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক হারুন চৌধুরী, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাড. মো: আজহারুল ইসলাম, জাতীয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল করিম, লেবার পার্টির আরেক অংশের চেয়ারম্যান মো. ফারুক রহমান, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাড. তাজুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. সামছুল আলম, সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর, অপর অংশের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, এনডিপির চেয়ারম্যান কারী আবু তাহের, বিপিপির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী, কো-চেয়ারম্যান পারভীন নাসের খান ভাসানী, জাস্টিস পার্টির প্রেসিডেন্ট জাভেদ সালাউদ্দিন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাসিম খান, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ডা. সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খোকন চন্দ্র দাস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here