আড়াই মাসে চট্টগ্রাম মহানগরেই ৩০ মামলায় গ্রেপ্তার সহস্রাধিক

0
56

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেছে মহানগর বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে গত আড়াই মাসে শুধুমাত্র মহানগরে ৩০টির অধিক মিথ্যা মামলা দায়ের ও সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। বুধবার দুপুরে নগরীর কাজীর দেউড়ী নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের দিন চান্দগাঁও এলাকায় সংঘটিত ঘটনার সঠিক তদন্তপূর্বক বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারপূর্বক গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ করে অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতাকর্মীদের মুক্তির জোর দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, এ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। ভোট উৎসবের পরিবর্তে চট্টগ্রামে ভোট বর্জনের এক নীরব প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে। চট্টগ্রাম নগরীর তিনটি আসনের প্রার্থীদের অবস্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব আসনে প্রার্থীরা ভোটার আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেখানে ভোট পড়েছে ২০-২৬ শতাংশ। কিন্তু সারা দেশে ভোটের হার দেখানো হয়েছে ৪১ শতাংশের বেশি। যেখানে এজেন্ট ছিল না সেখানে জাল ভোটের মহোৎসব হয়েছে।

এর মাধ্যমে ভোটের কাস্টিং বাড়ানো হয়েছে।

 

নির্বাচনকে প্রহসন ও তামাশার ভোট মন্তব্য করে ডা. শাহাদাত বলেন, যেখানে নিজেরা নিজেরা ভোট করেছে, সেখানেও ভোটের এ অবস্থা। তাতেই বোঝা যায় বিএনপি কী কারণে এ ভোট বর্জন করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি’র ডাকা হরতাল-অবরোধকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, যুগ্ম আহ্বায়ক এসকে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শাহ আলম, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মন্‌জুর আলম চৌধুরী মন্‌জু, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচএম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন সহ শত শত নেতাকর্মীর নামে নগরীর প্রতিটি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ এমএ আজিজকে বিনা ওয়ারেন্টে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। গত আড়াই মাসে মহানগরে ৩০ টির অধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করে প্রায় এক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ডা. শাহাদাত বলেন, নির্বাচনের দিন বিএনপি’র ডাকা হরতাল চলাকালে চান্দগাঁও মৌলভী পুকুরপাড় এলাকায় বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের আহত করে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে। দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, মহানগর যুবদলের সি. যুগ্ম সম্পাদক মোশারফ হোসেন, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি নওশাদ আল জাসেদুর রহমান ও চান্দগাঁও থানা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুর রহমান আলফাজ সহ ২০০/২৫০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের পরের দিন থেকে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে চান্দগাঁও থানা পুলিশ কর্তৃক হয়রানিমূলক অভিযান, পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার ও মারধরের ঘটনা বিরতিহীনভাবে চলে আসছে।

তিনি বলেন, চান্দগাঁও থানা এলাকায় বিরোধী দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণ এখন একাত্তরের দিনগুলোর চেয়েও চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। চান্দগাঁও এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। চান্দগাঁও থানা পুলিশ বিএনপি নেতাদের বাসায় না পেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করছে। দিনে- রাতে যে কোনো সময় নেতাকর্মীদের ধরতে বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে। টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে বাসায় না পেয়ে তাদের পিতা, ভাই কিংবা অন্য সদস্যদের অন্যায়ভাবে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। আটককৃত নেতাকর্মী কিংবা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের থানায় নিয়ে গিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হচ্ছে। চান্দগাঁও থানা এলাকা এখন অনেকটা পুরুষশূন্য। পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে সাধারণ মানুষও ঘরে থাকতে পারছে না।

ডা. শাহাদাত বলেন, বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান ও এরশাদ উল্লাহ সহ উল্লিখিত নেতারা ঐদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না তারপরও তাদের আসামি করা হয়েছে। চান্দগাঁও শরাফত উল্লাহ পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার জামাল উদ্দিন, তিনি ঐদিন বোয়ালখালীর বাড়িতে ছিলেন। তাকে ২০ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ক্যাশিয়ার মো. হারুনকে ২১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। অথচ ঘটনার সময় পেট্রোল পাম্পের ভেতরে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ডিবি’র গাড়ি পার্কিং করে রেখেছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আছে, দেখলে সবকিছু পরিষ্কার হবে।

তিনি বলেন, গত ৯ই জানুয়ারি রাতে চান্দগাঁও থানা পুলিশ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি নওশাদ আল জাসেদুর রহমানের মৌলভী পুকুর পাড়স্থ বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার প্রবাসী বড় দুই ভাই আবেদ মাহমুদ রহমান ও ব্যাংকার জাবেদুর রহমানকে আটক করে থানায় নিয়ে নির্যাতনের পর আবেদ মাহমুদ রহমানকে বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া চান্দগাঁও থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এরশাদ হোসেনের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার বাবা আবদুর রাজ্জাক ও বড় ভাইকে বাসায় সবার সামনে বেধড়ক মারধর করে ও বড় ভাই মো. জাবেদকে মিথ্যা মামলায় চালান দিয়েছে। এছাড়া চান্দগাঁও ওয়ার্ড যুবদল নেতা মো. আবছারের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার মামা মো. মামুনকে, ওয়ার্ড যুবদল নেতা জিসানকে না পেয়ে তার বাবা মো. ইলিয়াস, ওয়ার্ড যুবদল নেতা মো. শাহীনকে না পেয়ে তার বড় ভাই মো. শামীম, চান্দগাঁও থানা যুবদলের সদস্য মো. মোবারক, মোহরা ওয়ার্ড যুবদল নেতা আবদুর রাজ্জাক, যুবদলকর্মী মঞ্জুর আলম ও মো. সাইদকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার ও চান্দগাঁও ওয়ার্ড যুবদল নেতা নয়ন মাহমুদকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবা মো. ইদ্রিসকে বেধড়ক মারধর করেছে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। এর আগে নির্বাচনের দিন চান্দগাঁও ওয়ার্ডে বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র শ্রম সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দীন, মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক  ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, কাজী বেলাল উদ্দিন, আবদুল মান্নান, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হারুন জামান, মাহবুব আলম, আরইউ চৌধুরী শাহীন, আনোয়ার হোসেন লিপু, মো. কামরুল ইসলাম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, থানা বিএনপি’র সভাপতি মন্‌জুর রহমান চৌধুরী, মামুনুল ইসলাম হুমায়ূন, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ জাকির হোসেন, হাজী বাদশা মিয়া, গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় ড্যাব’র সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. এসএম সারোয়ার আলম, মহানগর বিএনপি’র দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. ইদ্রিস আলী উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here